নগর পরিবহনের বাসের ফ্যানগুলো রাতের বেলায় বিশ্রাম পেলেও দিনের বেলায় শব্দ করে চলছে শীতের এই সময়েও। এর কারণ পৌষ শেষে ‘বাঘ কাঁপার’ মাঘ আসি আসি করছে, কিন্তু ঢাকায় হাড় কাঁপানো শীতের দেখা নেই। বরং দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় এই বোধ হতেই পারে এটা বুঝি গ্রীষ্ম।
২৫ পৌষ রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতে এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা বর্তমান প্রজন্ম দেখেনি এটা নিশ্চিত। এর আগের প্রজন্মেরও খুব বেশি মানুষের এই অভিজ্ঞতা হয়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ৪৪ বছর আগে ১৯৭৮ সালে আজকের দিনে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল এর চেয়ে বেশি; ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিনটিতে ঢাকায় সর্বনিম্ন যে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে, তাতে শীতের ভারী কাপড় গায়ে চাপানোরও দরকার নেই। বরং ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে বহুজনকে সাধারণ কাপড় পরেই চলতে দেখা গেছে।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলানায় ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এই সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
মিরপুর চিড়িয়াখানা ঘুরতে আসা এক দল মানুষের কারও গায়ে শীতবস্ত্র দেখা যায়নি
কেন এই অস্বাভাবিক গরম?
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পশ্চিমা লঘুচাপ এর কারণ। এর ফলেই বেড়েছে তাপমাত্রা। চলতি মাসের ১১-১২ তারিখের দিকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়ে পশ্চিমা লঘুচাপ কেটে আবার তাপমাত্রা কমতে থাকবে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পশ্চিমা লঘুচাপ না থাকলে ঠান্ডা থাকবে। এই লঘুচাপ তৈরি হয় ভূমধ্যসাগরে। পরে তা পূর্ব দিকে এগোতে থাকে, কাশ্মীরের দিকে এসে দুই ভাগ হয়ে যায়। একটি হিমালয় পাহাড়ের উত্তর দিকে চলে যায়। আরেকটি দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে।
‘পশ্চিমা লঘুচাপ যখন দিল্লি হয়ে ঢোকে তখন বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশের দিকে চলে এসেছে প্রায়। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশেও ১১-১২ তারিখের দিকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এরপর ১৪-১৫ তারিখের দিকে তাপমাত্রা কমতে থাকবে।’
খেলতে খেলতে পৌষে ঘর্মাক্ত শিশুদের দেখা মেলে এখন শহরের আনাচে-কানাচে
গত ৮ বছরের চিত্র
২০২১ সালের আজকের দিনে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল এবারের তুলনায় ১ ডিগ্রি কম, ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি। তবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল আজকের তুলনায় অনেক বেশি, ১৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি।
ঢাকায় ২০২০ সালে আজকের দিনে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি।
২০১৯ সালে আজকের দিনে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি।
২০১৮ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি।
কায়িক পরিশ্রম করলে শীত এমনিতেই কম লাগে। তাই এমন আবহাওয়ায় বাড়তি কাপড় নিয়ে বের হতে চাইছেন না শ্রমজীবীরা
২০১৭ সালে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি।
২০১৬ সালে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ২ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ১৭ ডিগ্রি।
২০১৫ সালে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি।
২০১৪ সালে আজকের দিনে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ১ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।