২০২২ সালকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের বছর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব প্রকল্প চলতি বছর উদ্বোধনের কথা বলেছেন, সেগুলোতে দেশবাসীর পেট ভরবে কি না, তা জানতে চেয়েছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।
গত শুক্রবার বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় রোববার এ কথা বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে প্রয়াত জাতীয়তাবাদী অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হয়ে আসেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘গত পরশু দিন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০২২ সাল হবে উন্নয়নের মাইলফলক। আমি বলতে চাই এই উন্নয়নের ধারায় দেশ ও জনগণ আর কত প্রতারিত হবে? আর কত নিঃস্ব হবে?’
জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর। আর কয়েক মাস পর জুন মাসেই আমরা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু।
‘এ বছরের শেষ নাগাদ আমরা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এ অংশে ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।… আগামী অক্টোবরে চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।’
এর জবাব দিয়ে রিজভী বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম সাত-আটটা পিওনের পদের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। সেখানে কয়েক হাজার আবেদন করা হয়েছে। তার মধ্যে অসংখ্য এমএ পাস আছে। এটাই হলো শেখ হাসিনার উন্নয়ন।’
বিএনপির প্রয়াত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য দোয়া ও আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন রিজভী। ছবি: নিউজবাংলা
‘মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার কি আমরা চিবিয়ে খাব?’- এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) ২০২২ সালকে বলেছেন উন্নয়নের মাইলফলক। আর গণতন্ত্রের কী হবে? কথা বলার স্বাধীনতার কী হবে? এই যে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট যারা সত্য কথা বলতে গিয়ে, সত্য মন্তব্য করায় যাদের নিরুদ্দেশ করেছেন, যাদের বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করেছেন, যাদের গুম করেছেন, তাদের কী হবে, গণতন্ত্রের কী হবে? সেই কথা বলার স্বাধীনতার কী হবে?’
সরকারের ঋণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আজকে যে সন্তানটি জন্মলাভ করছে, সে ৯৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জন্মলাভ করছে। আর আপনি (প্রধানমন্ত্রী) উন্নয়নের কথা বলেন! এটা যে ঋণের মাইলফলক হবে, বন্দুকযুদ্ধের মাইলফলক হবে, গুমের মাইলফলক হবে, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের কতজন গুমের শিকার হবে, তা বলা মুশকিল।’
সরকারের ‘লজ্জা-শরম নেই’ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘লাজলজ্জা যদি একেবারেই হারিয়ে যায়, তাকে কিছু বলার থাকে না। যাদের সামান্য হারায় তাদের কিছু বললে তারা আরও লজ্জিত হয়। আর যাদের মোটেও লাজলজ্জা থাকে না, তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলে তাদের কিছু যায় আসে না। লজ্জার সমস্ত আবরণ এই সরকার হারিয়ে ফেলেছে।’
দেশে এখন ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘আমরা এমন এক সমাজে বাস করি, যখন ডানে-বামে সব সময় তাকাতে হয় কেউ আমাকে অনুসরণ করছে কি না। এক প্রচণ্ড ভয় এবং শঙ্কার মধ্যে আমাদের দিন-রাত যখন অতিবাহিত হয়, তখন এই তরুণরা ফ্যাসিবাদ, নাৎসিবাদ, পৃথিবীর সব আইনকে করায়ত্ত করে জনগণের ওপর যারা ভয়ংকর অত্যাচার চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে এই অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা যে অস্ত্র হানে, এটা নিঃসন্দেহে গোটা জাতিকে প্রেরণা দেয় এবং আমরাও অনুপ্রাণিত হই।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ নাকি তার ওপর আস্থা রেখে ভোট দিয়েছে। বাহ প্রধানমন্ত্রী। আপনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে, ভয় দেখিয়ে আপনি যা খুশি তা বলতে পারেন। কিন্তু জনগণ কী বলে, আপনার ভয়ংকর শ্বাসরুদ্ধকর শাসনের মধ্য দিয়েও আপনার তরুণরা কী বলে, আপনি কি একবার পড়ে দেখেছেন?
‘আপনি দিনের ভোট রাতে করেন। আপনার ওপর জনগণ আস্থা রেখেছে, তো আপনি জনগণের ওপর আস্থা রাখলেন না কেন? আপনি তো ভোটারদের প্রতারিত করেছেন।’
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য এহমল হোসেন পাইলট, হায়দার আলী লেলিন।