বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হলো না সাতে সাত, পতনে কমল লেনদেনও

  •    
  • ৯ জানুয়ারি, ২০২২ ১৫:১৮

দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। বেশির ভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধির পাশাপাশি গত ৭ ডিসেম্বরের পর প্রথম সূচকের সাত হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তবে শেষ আড়াই ঘণ্টায় সূচক কমে ৮০ পয়েন্ট।

চার মাসের বাজার সংশোধন শেষের আভাস নিয়ে শুরু করা নতুন সপ্তাহের প্রথম দিন পুঁজিবাজার সূচকের বড় পতন দেখলেন বিনিয়োগকারীরা।

রোববার ৫৪ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট সূচকের পতন চলতি বছরের প্রথম। গত সপ্তাহে পাঁচ কর্মদিবসের প্রতিদিন এবং ২০২১ সালের শেষ কর্মদিবস ৩০ ডিসেম্বরও সূচক বেড়েছিল।

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বাজার সংশোধনের মধ্যে প্রথমবারের মতো টানা ছয় দিনের উত্থানের সুখস্মৃতি নিয়ে নতুন সপ্তাহে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। বেশির ভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধির পাশাপাশি গত ৭ ডিসেম্বরের পর প্রথম সূচকের সাত হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

বাজারে চাঙাভাবের সময় গত ৩১ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা আট কর্মদিবস সূচক বেড়েছিল। সাতে সাত হলে সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলার আশায় যারা ছিলেন, পরের আড়াই ঘণ্টায় তাতে পড়ে গুড়েবালি।

দুপুর ১২টার পর থেকে শেয়ারগুলো দর হারাতে থাকে, সেই সঙ্গে কমতে থাকে লেনদেন। শেষ আড়াই ঘণ্টায় সূচক কমে ৮০ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট।

দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৩২ পয়েন্টে।

বেলা ১২টায় সূচক সাত হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে লেনদেন হলেও সেখান থেকে ৮০ পয়েন্ট হারিয়ে শেষ হয় লেনদেন

সূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও খানিকটা ভাটার টান দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার লেনদেন ছিল ১ হাজার ৬৮৩ কোটি ৪৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। সেটি কমে হয়েছে ১ হাজার ৪৬১ কোটি ৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক দিনেই কমেছে ২২২ কোটি ৩৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।

দিন শেষে ৯৮টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৪৮টির দর। অপরিবর্তিত ছিল ৩২টির।

আলোচনায় ওমিক্রন বিধিনিষেধ

টানা ছয় কর্মদিবস বাড়ার পর এক দিন সূচক কমা যেমন অস্বাভাবিক নয়, তেমনি বেলা শেষে সূচকের এই পতনের পেছনে করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা, নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্তের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।

মহামারির তৃতীয় ঢেউ নড়েচড়ে বসছে বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশগুলোয়। জারি হচ্ছে বিধিনিষেধ। ওমিক্রম থেকে রক্ষা পেতে এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনা শুরু হয়েছে। গণপরিবহনে আর্ধেক যাত্রী, রাত ৮টার পর দোকান বন্ধ, করোনার টিকা নিশ্চিত করতে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ নতুন করে ভাবাছে বিনিয়োগকারীদের।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা শনাক্ত হওয়া, ২০২১ সালের এপ্রিলে লকডাউনের আগে আগে এবং একই বছরের জুলাইয়ের শেষে শাটডাউন নামে বিধিনিষেধ দেয়ার আলোচনা তৈরি হওয়ার পরও এই ধরনের পতন দেখা গেছে।

এটি ছয় দিনের উত্থানের পর স্বাভাবিক সংশোধন, নাকি বিধিনিষেধ নিয়ে দুশ্চিন্তা- তার বিষয়টি কিছুদিন পর স্পষ্ট হতে পারে।

এর আগে লকডাউন ও শাটডাউনের আগে আগে সূচক পড়েছিল লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে গুঞ্জনে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যদিও বারবার বলছিল, ব্যাংক খোলা থাকলে লেনদেন চালু থাকবে- তার পরও আস্থাহীনতায় ভুগেছেন বিনিয়োগকারীরা। যদিও পরে যখন লেনদেন চালু হয়, দুবারই সূচকের উত্থান দেখে পুঁজিবাজার।

রোববারের দরপতনের ওমিক্রমের সম্ভাব্য প্রভাবকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার। তিনি বলেন, ‘সূচক যে হারে বাড়ছিল তাতে এই পরিমাণ পতনে আতঙ্কের কিছু নেই। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ওমিক্রমের বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ আছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএসইসি গত বছরের করোনার বিধিনিষেধের মধ্যেও পুঁজিবাজারের লেনদেন চালু রেখেছিল। এতেই বোঝা উচিত, এবারও করোনার পরিস্থিতে লেনদেন নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।’

যেসব কোম্পানি কমিয়েছে সূচক

সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল রবি। কোম্পানিটির শেয়ারদর ৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ১৫ দশমিক ৯১ পয়েন্ট।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ১ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ দরপতনে সূচক কমেছে ৫ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট।

এ ছাড়া বেক্সিমকো লিমিটেডের ১ দশমিক ৮৭ শতাংশ দরপতনে ৩ দশমিক ৯২ পয়েন্ট আইসিবি ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ দরপতনে সূচক কমেছে ৩ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট।

সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় থাকা ১০ কোম্পানি

ব্র্যাক ব্যাংকের ২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ দরপতনে ২ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ দরপতনে ২ দশমিক ২৫ পয়েন্ট, পাওয়ার গ্রিডের ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ দরপতনে ২ দশমিক ১৬ পয়েন্ট সূচক কমেছে।

বেক্সিমকো ফার্মা, জিপিএইচ ইস্পাত, এনআরবিসিও সূচক কমিয়েছে।

সব মিলিয়ে সূচক ৪০ দশমিক ৬ পয়েন্ট কমিয়েছে এই ১০টি কোম্পানিই।

বিপরীতে শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ দর বাড়ায় গ্রামীণফোন সূচকে যোগ করেছে ৪ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট। ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ দর বাড়ার পর সূচকে ১ দশমিক ৪২ পয়েন্ট যোগ করেছে বসুন্ধরা পেপার মিল।

ফরচুন সুজ, ওয়ালটন, পদ্মা অয়েল, ফারইস্ট লাইফ, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, আর এ কে সিরামিকস, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ও ইউনিলিভারও সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে। সব মিলিয়ে এ ১০টি কোম্পানি সূচকে যোগ করেছে ১৩ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট।

এই ১০টি কোম্পানি সূচক টেনে তোলার চেষ্টা করেছে

যেগুলোর দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি

রোববার দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ দর বেড়েছে চারটি কোম্পানির। এর মধ্যে ১০ শতাংশ দর বেড়েছে বন্ধ কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের। ১০ টাকার শেয়ারদর পৌঁছেছে ১১ টাকায়। ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার লেনদেনে শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৭৭৬টি।

বসুন্ধরা পেপার মিলের ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, রংপুর ফাউন্ড্রির ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়েছে।

এএমসিএলের (প্রাণ) দর ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেড়ে ২৬৫ টাকা ৬০ টাকার শেয়ার উঠেছে ২৮৮ টাকা ৮০ পয়সায়।

৭ শতাংশের বেশি দর বেড়েছে তিনটি কোম্পানির। এর মধ্যে বিচ হ্যাচারির ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ৭ দশমিক ৫৭, ন্যাশনাল টি কোম্পানির দর ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়েছে।

তিনটি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের দর ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ, এপেক্স ফুডের ৬ দশমিক ৩৪ ও সিএনএ টেক্সটাইলের ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে।

দরপতনের শীর্ষ ১০

দরপতনের শীর্ষে ছিল শ্যামপুর সুগার মিল, যার দর কমেছে ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। আগের দিন শেয়ারের দাম ছিল ৮৯ টাকা ৬০ পয়সা। সেখান থেকে কমে হয়েছে ৮২ টাকা ৫০ পয়সা।

এই ৬টি খাতে একশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে

এস আলম কোল্ড রোল স্টিলের দরও কমেছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ৪৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৫৪টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

খেলাপি ঋণ আদায়ে সম্পদ নিলামে ওঠা আরএসআরএম স্টিলের দর কমেছে ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ ছাড়া মেঘনা পেটের দর ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ, ডেল্টা লাইফের দর ৫ দশমিক ৩৬, বিডি থাইয়ের দর ৫ দশমিক ৩৬, সি পার্ল হোটেলের দর ৫ দশমিক ১৮, জিবিবি পাওয়ারের দর ৫ দশমিক ১৮ শতাশং। এগুলো ছিল স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের দর ৫ দশমিক ১৬, ন্যাশনাল ফিড মিলসের দর ৫ দশমিক শূন্য ৬ ও জিলবাংলা সুগারের দর ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কমেছে।

লেনদেনে সেরা ১০

টাকার অঙ্কে রোববার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের। কোম্পানির দর কমলেও লেনদেন হয়েছে ১০৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৭০ লাখ ২৫ হাজার ১০৩টি।

দুই সপ্তাহে শেয়ারদর দ্বিগুণ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের লেনদেন হয়েছে ৮০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৭৫ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬৫টি। শেয়ারদরে যোগ হয়েছে ৬০ পয়সা।

বেশিরভাগ খাতেই বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে

তৃতীয় অবস্থানে থাকা ডেল্টা লাইফের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬০ কোটি ১৯ লাখ টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ২৯ লাখ ১২ হাজার ৫৩৯টি।

লাফার্জ হোলসিম সিমেন্টে লেনদেন হয়েছে ৫৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। পাওয়ার গ্রিডের লেনদেন হয়েছে ৪৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা, ফরচুন সুজে লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

এ ছাড়া বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলের ৩৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ২৭ কোটি ৪ লাখ টাকা, সাইফ পাওয়ারটেকে ২৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার আর দ্য পেনিনসুলা চিটাগাংয়ে লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর