করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এবং করোনারোধী টিকা কার্যক্রমে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথমে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশ এখনও ১০ শতাংশের ওপরে ভ্যাকসিন দিতে পারেনি। বাংলাদেশ প্রথম ডোজ ৬০ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ ৪০ শতাংশ মানুষকে দিতে সক্ষম হয়েছে। দেশের প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব হয়েছে। সব জনগোষ্ঠীর টিকা নিশ্চিতে ৩১ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রোববার ১১টার দিকে আট বিভাগে আটটি ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের সময় এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ফের বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘শনাক্ত আবার বেড়ে চলেছে। বাড়তে বাড়তে সংক্রমণ সংখ্যা ১১ শতে পৌঁছেছে, যা আশঙ্কাজনক। এটি নিয়ন্ত্রণে যথাযথভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।’
সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সাবান-পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে।’
বছরে ক্যানসারে মৃত্যু এক লাখ
দেশে ক্যানসার রোগীর তুলনায় চিকিৎসাসেবা এখনও অপ্রতুল বলে জানান মন্ত্রী। জানিয়েছেন, দেশে প্রতি বছর দেড় লাখের বেশি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে; এর মধ্যে ১ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, দেশে ক্যানসার চিকিৎসা এখনও অপ্রতুল। দেশে প্রত্যেক বছর দেড় লাখের বেশি মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ১ লাখ মৃত্যুবরণ করছে। ভেজাল খাবার, স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবন ব্যবস্থা, মাদক ও ধূমপানের কারণে ক্যানসার আক্রান্তের হার বাড়ছে।
দেশে বর্তমানে ক্যানসারে আক্রান্ত ২০ লাখ রোগী রয়েছে। তার বিপরীতে চিকিৎসা অনেক অপ্রতুল। এই চিকিৎসার জন্য সারা দেশে মাত্র ৫০০টি শয্যা রয়েছে, যা কয়েক হাজার প্রয়োজন ছিল।
মন্ত্রী বলেন, ‘১০ লাখ রোগীর ক্যানসারের জন্য রেডিওথেরাপি প্রয়োজন। সেই তুলনায় বাংলাদেশের ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ১৬০টি রেডিওথেরাপি মেশিন প্রয়োজন। তবে আমাদের দেশে হাতে গোনা ২০ থেকে ২৫টি রেডিওথেরাপি মেশিন রয়েছে।’
দেশে কিডনিসংক্রান্ত রোগের পরিস্থিতিও তুলে ধরেন জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘কিডনি রোগে আমাদের দেশে ২ কোটির অধিক মানুষ আক্রান্ত থাকেন। বছরে মারা যায় ২০ হাজারের বেশি লোক। ৩০ হাজারের মতো মানুষের ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে দুঃখের বিষয় সরকারি-বেসরকারি মিলে ২ হাজারের বেশি মানুষকে ডায়ালাইসিস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেকেই। বিশেষ করে দারিদ্র্য শ্রেণি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এক বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক লাখের অধিক মানুষ মারা যায়। দেশে এক কোটি লোকের বেশি কোনো না কোনোভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত রয়েছেন। বেসরকারি-সরকারিভাবে হৃদরোগের চিকিৎসা কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
দেশের আট বিভাগে যে আটটি ক্যানসার ইনস্টিটিউট হচ্ছে, এর মাধ্যমে শুধু চিকিৎসাসেবার মান উন্নত হবে না, অনেক মানুষ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাবে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিদেশি চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতা কমে যাবে। হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সব জেলায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। জেলায় জেলায় ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপন করাও সম্ভব হয়েছে।