শীতের কারণে লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। রোগীর চাপ বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে শুধু এই হাসপাতালেই এক হাজারের বেশি শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে ১০০-এর বেশি শিশু। অথচ হাসপাতালে বেড রয়েছে মাত্র ১৫টি। একই চিত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও।
এতে চিকিৎসা নিতে এসে বিপাকে পড়ছেন রোগী ও স্বজনরা। তাদের কেউ কেউ সেবা না নিয়েই বাড়ি ফিরছেন। অনেকে আবার ছুটছেন প্রাইভেট হাসপাতালে।
গত ৬ জানুয়ারি সকালে সরেজমিনে ১০০ শয্যার লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে শিশু রোগীর চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। এদের বেশির ভাগ নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
১০০ শয্যার লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতাল। ছবি: নিউজবাংলা
জানা যায়, এ চিত্র এখন প্রতিদিনের। ১০ দিন ধরে এভাবেই রোগীর চাপ বাড়ছে। এ সময় কথা হয় শিশু ফাতিন হাসনাতের মা আমেনা বেগমের সঙ্গে।
তিনি জানান, প্রতিদিনই বাড়ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্তদের সংখ্যা। হাসপাতালে পা ফেলার মতো অবস্থা নেই।
কথা হয় আরও দুই শিশুর স্বজন কামাল উদ্দিন ও জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে। তারা জানান, তাপমাত্রার পারদ কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। দুই দিন ধরে তাদের শিশু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি করাতে এসে শয্যা খালি না থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
তারা আরও জানান, প্রতি বেডে তিন থেকে চারজন শিশুকে ভর্তি করে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অনেক শিশুকে মেঝেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এতে শিশুরা আরও বেশি অসুস্থ হচ্ছে।
একই কথা বলেন হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু সাইমুন হোসেনের মা কুলছুম বেগমসহ অনেকেই।
শুধু জেলা সদর হাসপাতালেই নয়, এ ধরনের চিত্র কমলনগর, রামগতি, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও।
জেলা শহরের কমফোর্ট ডায়াগনস্টিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জয়নাল আবেদিন ও সিমি ফার্মেসির মালিক লিটন চন্দ্র মজুমদার জানান, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শিশুরা চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে ভিড় করছে।
রোগীর চাপে হাসপাতালে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। অনেকে আবার সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে ছুটছেন প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে।
ঠান্ডাজনিত রোগে হাসপাতালেই ভর্তিদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। ছবি: নিউজবাংলা
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটির নির্বাহী সদস্য সাংবাদিক সেলিম উদ্দিন জানান, রোগীর চাপে হাসপাতালে পা রাখার জায়গা নেই। বারান্দায় ও ওয়ার্ডের মেঝেতে শিশুদের রাখা হচ্ছে। প্রতি বেডে এক শিশুকে চিকিৎসা দেয়ার কথা থাকলেও নেয়া হচ্ছে দুই থেকে তিনজন শিশুকে।
গাদাগাদি করে চিকিৎসার কারণে রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনরাও আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।
জেলা বেসরকারি প্যাথলজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লুৎফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতালে বেডের তুলনায় ১০ গুণ বেশি রোগী ভর্তি করা হচ্ছে।’
জেলা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মো. ইছমাইল হাসান জানান, ঠান্ডার কারণে সামনে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কিন্তু রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এ সময়ে শিশুদের গরম কাপড় পরিধানসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল গাফ্ফার বলেন, ‘প্রতিদিন আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী। এর মধ্যে বেশির ভাগই নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু।
‘প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে আতঙ্কের কিছু নেই। পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা রয়েছে। চিকিৎসকরা সাধ্যমতো চিকিৎসা দিচ্ছেন।’