ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় ইজিবাইক মিস্ত্রি মো. ইমদাদ হোসেনের ডান চোখ নষ্টের ঘটনা পঁচাত্তর হাজার টাকায় আপোষ মীমাংসা করেছে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত ৫ জানুয়ারি সকালে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চক্ষু সার্জন মীর্জা মাহাবুবুর রহমানের কক্ষে ওই আপোষের ঘটনাটি ঘটে। কাঠালিয়া উপজেলা ও আমুয়ার ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে রফাদফার বিষয়টি অত্যন্ত গোপন রাখা হয়।
এ ঘটনায় ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সদর হাসপাতালের চক্ষু সার্জন মীর্জা মাহাবুবুর রহমানের নামে একটি মামলা তদন্তনাধীন আছে। মামলাটি করেছেন ভুক্তভোগী মো. ইমদাদ হোসেন নিজেই।
এলাকাবাসী ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০ অক্টোবর সকালে কাঁঠালিয়ার আমুয়া বাজারে একটি ইজিবাইক মেরামতের সময় মেকার মো. ইমদাদ হোসেনের ডান চোখে লোহার কনা প্রবেশ করে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
পরে ওই দিন বিকেলে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের চক্ষু সার্জন মীর্জা মাহাবুবুর রহমানের সদর চৌমাথার চেম্বারে দেখাতে যান ইমদাদ।
কিন্তু মীর্জা মাহাবুবের চিকিৎসায় ইমদাদের চোখে ক্ষতের সৃষ্টি হলে তিনি ঢাকার ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনিস্টিটিউটে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন।
ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরাই ইমদাদকে জানান, ভুল চিকিৎসার কারণে তার ডান চোখটি চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই চোখটি তুলে ফেলতে হবে। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ইমদাদাদের ডান চোখটি তুলে ফেলেন।
ইমদাদ ডান চোখ হারিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের চক্ষু সার্জন মীর্জা মাহাবুবুর রহমানের নামে একটি মামলা করেন।
বিচারক এ এইচ এম ইমরানুর রহমান মামলাটি তদন্তের জন্য ঝালকঠি সদর থানায় প্রেরণ করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গৌতম কুমার ঘোষ ঘটনার সত্যতা খুঁজে পান।
এদিকে, চক্ষু সার্জন মীর্জা মাহাবুবুর রহমান মামলা তুলে নিতে বাদী মো. ইমদাদ হোসেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় সরকার দলীয় রাজনীতিবিদদের দ্বারস্থ হন।
মীর্জা মাহাবুবকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন কাঁঠালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. এমাদুল হক ও আমুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম সিকদার। তারা দুজন ভুক্তভোগী মো. ইমদাদ হোসেনকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করেন।
এক পর্যায়ে নিজেকে অসহায় ভেবে ইমদাদ চিকিৎসকের সঙ্গে আপোষ করতে রাজি হন।
দুই লাখ টাকার প্রলোভন দেখানো হলেও গত ৫ জানুয়ারি ইমদাদকে ৭৫ হাজার টাকা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. ইমদাদ হোসেন বলেন, ‘আমার আসল বাড়ি যশোরে। তিন সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে আমুয়ায় থেকে আমাকে কাজ করে খেতে হবে। তাই স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কথা ফেলতে পারিনি। বাধ্য হয়ে চক্ষু সার্জন মীর্জা মাহাবুবুর রহমানের সঙ্গে ৭৫ হাজার টাকায় আপোষ করেছি। তবে আমার মূল্যবান সম্পদ চোখ তো আর ফিরে পাবো না।’
এ বিষয়ে চক্ষু সার্জন মীর্জা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘ভুল যা করার তা করে ফেলেছি। এখন তো আমাকে ফাঁসি দিলেও তার চোখ ফিরে পাওয়া যাবে না। আপনারাও আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
আমুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম ফোরকান সিকদার বলেন, ‘ভুক্তভোগী আপোষ করতে রাজি হয়েছেন। আমরা শুধু মধ্যস্থতা করেছি। এখানে দোষের কিছু নেই।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গৌতম কুমার ঘোষ বলেন, ‘ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেয়েছি। শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হবে। তবে মামলায় আপোষ মীমাংসার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।’