মা চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে না পারায় এক শিশুকে এনআইসিইউ থেকে বের করে দিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্য হাসপাতালে নেয়ার পথে শিশুটি মারা যায়।
এ ঘটনায় দায়ের মামলায় রাজধানীর শ্যামলীতে ‘আমার বাংলাদেশ’ নামে ওই হাসপাতালের পরিচালক গোলাম সারওয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দুই দিনের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
৮ জানুয়ারি শনিবার তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সাইফুল ইসলাম। মোহাম্মদপুর থানায় করা ইচ্ছাকৃত অবহেলাজনিত হত্যা মামলায় তাকে পাঁচ দিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে পুলিশ।
সেই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শুভ্রা চক্রবর্তী গোলাম সারওয়ারকে দুই দিনের রিমান্ড দেন।
শুক্রবার বিকেলে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-২ ও র্যাব-৩-এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে হাসপাতালের পরিচালক গোলাম সারওয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গোলাম সারওয়ার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কাছে স্বীকার করেন, তার হাসপাতালে রোগী ভর্তির জন্য বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে দালাল নিয়োগ করা আছে। দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেসরকারি ওই হাসপাতালটিতে গত ২ জানুয়ারি যমজ দুই ভাইকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকে বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হতে থাকে। না হলে চিকিৎসা দেয়া হবে না বলে জানানো হয়। ভুক্তভোগী পরিবার ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করে। তবে অতিরিক্ত আরও অর্থ দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ টাকা পরিশোধ না করায় চিকিৎসা বন্ধ রাখা হয় বলে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। টাকা না পাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যমজ সন্তানকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়।
গত ৩১ ডিসেম্বর ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভোগা ছয় মাস বয়সী যমজ দুই শিশু আহমেদ ও আব্দুল্লাহকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন মা আয়েশা বেগম। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শিশু দুটিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার কথা বলেন সোহরাওয়ার্দীর চিকিৎসকরা।
ওই হাসপাতালে আইসিইউ বেড না থাকায় দালালের মাধ্যমে ২ জানুয়ারি যমজ দুই সন্তানকে ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে’ নেন আয়েশা বেগম।
সেখানে তিন দিন আইসিইউতে রেখে চিকিৎসার পর তাকে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা বিলের কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে ওই টাকা জোগাড়ের সাধ্য নেই জানানোর পর আয়েশার সঙ্গে রাগারাগি করেন হাসপাতালের পরিচালকসহ দায়িত্বে থাকা অন্য কর্মকর্তারা। এরপর রোগী দুই শিশুকে বের করে দেয়া হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে শিশু আহমদ মারা যায় বলে জানান শিশুটির মা আয়েশা বেগম।
আয়েশার দাবি, বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে ৫০ হাজার ৫০০ টাকা জোগাড় করেন তিনি। এ ছাড়া সৌদি প্রবাসী স্বামীকে ফোন করে বিষয়টি জানালে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ১০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠান। সব মিলিয়ে ৬০ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করেন তিনি। তবে তাতে সন্তুষ্ট হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।