চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান কর্মসূচির ৫৩ দিন পার হলেও এক ডোজ টিকা পেয়েছে মাত্র ৫৩ হাজার শিক্ষার্থী। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার ৮৯৮ জন। এর মধ্যে স্কুলশিক্ষার্থী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭১৬ জন, কলেজশিক্ষার্থী ৫৫ হাজার ৯৯৭ জন ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থী রয়েছে ১৭ হাজার ১৮৫ জন।
সে হিসাবে মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৮০ শতাংশ এখনও প্রথম ডোজের টিকা পায়নি।
প্রায় ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর গেল বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয় সরকার।
সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সশরীরে ক্লাস করতে হলে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের অন্তত এক ডোজ টিকা নিতে হবে।
এমন অবস্থায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের আশঙ্কা, টিকা কার্যক্রমের যে গতি, তাতে আগামী দুই মাসেও সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে না।
এমন পরিস্থিতি হলে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কমার আশঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রমেও পড়তে পারে বিরূপ প্রভাব।
নগরীর প্রথম সারির একটি কলেজে পড়েন খুলশী এলাকার আবদুল মান্নানের মেয়ে।
নিউজবাংলাকে আবদুল মান্নান বলেন, ‘টিকার জন্য নিবন্ধন করার ২০ দিন পার হলেও এখনও টিকা পায়নি আমার মেয়ে। তার ওপর টিকা নিবন্ধনের জন্য স্থানীয় ওয়ার্ড অফিস থেকে বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন নিতেও ভোগান্তি কম পোহাতে হয়নি।
‘সরকারের উচিত স্কুল-কলেজভিত্তিক গণটিকাদান কার্যক্রম নেয়া। তা না হলে আমাদের সন্তানরা পড়াশোনায় আবারও পিছিয়ে পড়বে।’
হালিশহর এলাকার আবুল খায়ের নামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘নামকরা স্কুলের শিক্ষার্থীরা সবার আগে টিকা নিশ্চিত করলেও মধ্যম সারির স্কুলের শিক্ষার্থীরা সে সুযোগ পাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে স্কুলের পাশাপাশি ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়েও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ টিকাদান কার্যক্রমের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
বিদ্যমান টিকাকেন্দ্রের সংখ্যা প্রয়োজনে বাড়ানো দরকার বলেও মনে করেন এ অভিভাবক।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুলের শিক্ষক মনসুর নবী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করতে ক্লাস ও বয়সের ভিত্তিতে টিকা দেয়া যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগে নবম থেকে দশম শ্রেণি, পর্যায়ক্রমে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের টিকা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া উচিত৷’
‘আর যেসব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টিকা পেতে দেরি হবে, তাদের অনলাইনে ক্লাস চালু রাখা যেতে পারে।’ এতে করে শ্রেণি কার্যক্রমও ব্যাহত হবে না বলে মনে করেন তিনি।
নগরীর একটি মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক আল্লামা বেলাল হোসেন নূরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাদ্রাসা সব সময় অবহেলিত থাকে। তাই স্কুল-কলেজের পাশাপাশি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদেরও টিকাদানের আওতায় আনতে হবে।
‘কারণ মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে একসঙ্গে থাকে। তাই সংক্রমণের ঝুঁকি এখানে অন্য জায়গা থেকে বেশি।’
নিউজবাংলাকে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস হোসেন জানান, গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে নগরীর ৫টি কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।
শুরুর দিকে দৈনিক গড়ে এক হাজার থেকে দেড় হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রমের গতি আনতে টিকা নিবন্ধনেও শিথিলতা আনা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হােসাইনী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নগরীতে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৩ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রথম ডােজ এবং প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থীকে আমরা দ্বিতীয় ডােজের টিকা দিয়েছি।
‘দৈনিক ৮ থেকে ১০ হাজার শিক্ষার্থী যাতে টিকার আওতায় আসতে পারে আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’