করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত স্বাস্থ্য। এ খাতের উন্নয়ন প্রকল্পে বড় অঙ্কের বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে সরকার। তবে বছরের মাঝপথে এসেও খরচের হাত খুলতে পারছে না খাতটি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের দিক দিয়ে সবার পেছনে এ খাত।
এবার এডিপিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গত জুলাই-নভেম্বর ৫ মাসে এ বিভাগ খরচ করেছে মাত্র ৮৩৬ কোটি টাকা। বরাদ্দ অনুপাতে খরচ হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
চলতি অর্থবছর ২ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার এডিপির অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ পেয়েছে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ বরাদ্দ। অথচ এডিপি বাস্তবায়নের দিক দিয়ে সংস্থাটি ৫৩তম অবস্থানে। স্বাস্থ্যের পরের অবস্থানের মন্ত্রণালয়গুলোর বরাদ্দ খুবই কম।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ছাড়াও এ খাতের অন্য অংশ খরচ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। তাদের খরচ বরাদ্দ অনুপাতে কিছুটা বেশি। ২ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে এ বিভাগ খরচ করেছে ৪৭১ কোটি টাকা বা ১৮ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে গত দুই বছরের উন্নয়ন বাজেটে সরকার বেছে বেছে অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোয় বরাদ্দ দিয়েছিল। এর মধ্যে স্বাস্থ্য খাত বেশি গুরুত্ব পায়। করোনায় এ খাতের কাজ হওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে বেশি। অথচ প্রায় দুই বছর হতে চলল, এ খাত এডিপি বাস্তবায়ন বাড়াতে পারছে না। হওয়ার কথা উল্টোটা।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ কমে আসায় দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের কাজ দেখে তা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
‘করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বাজেটে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে বিশেষ নির্দেশনা থাকা উচিত ছিল। করোনাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে এ খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর উপায় ছিল। কিন্তু তাদের সক্ষমতা বাড়েনি। বলা যায়, তারা নিজেদের সক্ষমতা বাড়ায়নি। এখানে নানা অনিয়মের কারণে এমনটি হচ্ছে। গত বছরও তাদের বড় টাকা ফেরত গেছে। এবারও পুরো অর্থ ঠিকমতো ব্যয় করা বড় চ্যালেঞ্জ। এ থেকে বের হয়ে আসা উচিত।’
যেসব প্রকল্প স্বাস্থ্য খাতে
চলতি বছর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ৪৬টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে আছে করোনা সংশ্লিষ্ট দুটি প্রকল্পও। ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকার ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডামিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্পে অর্থায়ন করে বিশ্বকব্যাংক ও এআইআইবি। ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি অ্যাসিসট্যান্স’ প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সহায়তা দিচ্ছে।
প্রায় ৩৬ হাজার ২২০ কোটি টাকার ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচি’ও রয়েছে এ খাতে। এই এক কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে ২০ প্রকল্প রয়েছে। নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, বিদ্যমান হাসপাতাগুলোতে বিভিন্ন নতুন ইউনিট খোলা ও সক্ষমতা বাড়ানোর ১৫টি প্রকল্পও রয়েছে।
স্বাস্থ্যের পরে যেসব মন্ত্রণালয়ের অবস্থান
গত পাঁচ মাসে বরাদ্দ ও খরচের অনুপাতে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ বিভাগ ১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েও খরচ করেছে মাত্র ১২ কোটি টাকার মতো।
পিছিয়ে পড়ার তালিকায় আরও রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ৪১৯ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে এটি খরচ করেছে প্রায় ৯ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ১৪ শতাংশ।
৩৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে আইন ও বিচার বিভাগ খরচ করেছে ১০ কোটি ৯০ লাখের মতো বা ৩ দশমিক ১২ শতাংশ। সুরক্ষা সেবা বিভাগ ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া ১৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খরচ করেছে ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ১০ শতাংশ।