বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধলেশ্বরীর পাড়ে ৩ দিন, শোক এখন ক্ষোভ

  •    
  • ৭ জানুয়ারি, ২০২২ ২০:৩৩

রহমান বলেন, ‘ট্রলারে যখন লঞ্চ ধাক্কা দেয়, তখন চাচি তার বোনকে মোবাইলে কল দিয়ে জানাইছে। চাচি চিৎকার করে বলতেছিল যে ট্রলার ডুইবা যাইতাছে... আমাগো পরিবারের সদস্যগো জীবিত বা মৃত হোক আমরা তাদের চাই।’

ছেলের খোঁজে তিন দিন ধরে ধলেশ্বরীর পাড়ে অপেক্ষায় বসে আছেন শান্তা বেগম। দুদিন ধরে অনবরত কাঁদছিলেন, তবে শুক্রবার তার চোখে-মুখে দেখা গেছে ক্ষোভ। ছেলেকে তিন দিনেও কেউ উদ্ধার করে দেয়নি বলে ক্ষুব্ধ বাবা মো. রাজুও।

নিউজবাংলাকে রাজু জানান, সাব্বির হোসেন তাদের একমাত্র সন্তান; পড়তেন নারায়ণগঞ্জ কর্মাস কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে। কলেজ থেকে ক্লাস পরীক্ষার প্রবেশপত্র আনতে বুধবার সকালে বক্তাবলীর মধ্যনগর থেকে ট্রলারে করে ধলেশ্বরী পাড়ি দিচ্ছিলেন সাব্বির।

তাকেসহ অন্তত ৩০ যাত্রী বহনকারী ওই ট্রলারটি বুধবার সকালে এমভি ফারহান-৬ নামের লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায় নদীতে। বেশির ভাগ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও তিন দিন ধরে নিখোঁজ সাব্বিরসহ ১০ জন।

বুধবার থেকেই ধলেশ্বরীর তীরে ওই ১০ জনের খোঁজে অপেক্ষায় আছেন তাদের স্বজনরা।

রাজু বলেন, ‘তিন দিন পার হইয়া যাইছে, তারা (উদ্ধারকারীরা) এখনও একটা মানুষের খোঁজ বের করতে পারল না। তারা কীসের অভিযান করতাছে? আমি আমার পোলা চাই।’

ছেলেকে না পেয়ে ক্ষুব্ধ শান্তা ও রাজু। ছবি: নিউজবাংলা

নদীর তীরে অপেক্ষায় থাকা আব্দুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি এসেছেন ফতুল্লা থেকে, খুঁজছেন চাচি জিয়াসমিন আক্তার, চাচাতো বোন তাসনিম আক্তার এবং তাসনিমের স্কুলপড়ুয়া ছেলে ও দেড় বছরের মেয়েকে। তারাও ছিলেন ডুবে যাওয়া ট্রলারে।

রহমান জানান, তার চাচা শফিকুল ইসলাম সোহেল ব্যক্তিগত কাজে ছিলেন কুড়িগ্রামে। চাচি মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে ট্রলারে করে বোনের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিলেন। ট্রলারডুবির খবর পেয়ে সোহেল নদীর তীরে পৌঁছান বুধবার রাতে। শোকে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন বলে তাকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। পরিবারের চার সদস্যের খোঁজে তাই তিনিই তীরে অপেক্ষায় আছেন।

রহমান বলেন, ‘ট্রলারে যখন লঞ্চ ধাক্কা দেয়, তখন চাচি তার বোনকে মোবাইলে কল দিয়ে জানাইছে। চাচি চিৎকার করে বলতেছিল যে ট্রলার ডুইবা যাইতাছে। এরপর আমরা নদীর তীরে গিয়ে দেখি লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলার ডুবছে।

‘বড় বড় নদীতে লঞ্চ ডুবে যায়, সেখানে দ্রুত সবকিছু হয়ে যায়, কিন্তু এখানে তারা কিছুই করতে পারছে না। আমগো পরিবারের চারজন মানুষ এখনও নিখোঁজ। দুই দিন পার হয়ে যাইতাছে, কিন্তু তারা সন্ধান করতে পারতাছে না। তাহলে কী উদ্ধার অভিযান করতাছে। আমাগো পরিবারের সদস্যগো জীবিত বা মৃত হোক আমরা তাদের চাই।’

ট্রলারডুবির পর থেকেই নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযানে আছে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও কোস্টাগার্ড। শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত ওই ১০ জনের কাউকেই উদ্ধার করা যায়নি।

নিখোঁজ অন্যরা হলেন বক্তবলীর উত্তর গোপালনগর এলাকার মোতালেব মিয়া, চরবক্তবলীর আওলাদ হোসেন, একই এলাকার মো. আব্দুল্লাহ, মো. শামসুদ্দিন ও জোসনা বেগম।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল হালিম জানান, নদীর গভীরতা বেশি। এ কারণে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি এখনও শনাক্ত করা যায়নি। নিখোঁজদেরও পাওয়া যায়নি। উদ্ধারকাজে তৃতীয় দিন নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, নদীর তলদেশ ও দুই পাশের অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

ট্রলারডুবির ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এরই মধ্যে এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের মাস্টার কামরুল হাসান, চালক জসিমউদ্দিন ভূঁইয়া ও সুকানি জসিম মোল্লাকে আসামি করে ফতুল্লা থানায় মামলা করেছেন বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক (নৌ নিরাপত্তা বিভাগ) বাবু লাল বৈদ্য। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, জব্দ করা হয়েছে লঞ্চটিও।

ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম জানান, মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে কুয়াশার মধ্যে বেপরোয়া গতিতে লঞ্চটি চলছিল। এ কারণে এই দুর্ঘটনা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর