অবহেলাজনিত কারণে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় আমার বাংলাদেশ হাসপাতালের মালিক গোলাম সরোয়ারকে গ্রেপ্তারের পর হাসপাতালটির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
সাধারণ নিয়মানুযায়ী, কোন খাতে কত চার্জ হয়েছে, তা নির্ধারিত করে বিল তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে বিল তৈরি হয় মালিক গোলাম সরোয়ার যা বলে দেন সে অনুযায়ী।
গোলাম সরোয়ারের এমন স্বেচ্ছাচারিতা ও অবহেলার শিকার হয়ে বৃহস্পতিবার মারা গেছে এক শিশু।
মোহাম্মদপুর থানায় ওই শিশুর মা মামলা করেন। সে মামলার আসামি মালিক গোলাম সরোয়ারকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শুক্রবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে বাহিনীর মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী মা আয়েশা বেগম জানান, ঠাণ্ডাজনিত কারণে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করি দুই বাচ্চাকে। রোববার সেখানে থেকে বলা হয়েছে, তাদের এনআইসিইউতে নিতে হবে। সেখানে এনআইসিইউতে সিট পাওয়া যাচ্ছিল না।
‘পরে যখন সিদ্ধান্ত নিই, সাভারে নিয়ে যাব। তখন হাসপাতালে এক অ্যাম্বুলেন্স চালক সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে আমাকে কৌশলে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালে শিশু দুটি চিকিৎসা নিচ্ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছয় দিন ভর্তি দেখিয়ে আমাদের কাছে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা দাবি করে।’
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে কয়েকবার ৫০ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি। আর পারিনি। হাত-পায়ে ধরেও লাভ হয়নি। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে আমাদের জোর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়।
‘হাসপাতালের কর্মী শাহিনকে দিয়ে দুই শিশুসহ আমাদের ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়। এখানে আনার আগেই এক শিশুর মৃত্যু হয়।’
ছয় মাস বয়সী আব্দুল্লাহ ও আহামেদ নামের শিশু দুটির মা কুমিল্লার হোমনা উপজেলার সৌদি প্রবাসী মো. জমালের স্ত্রী আয়েশা বেগম। তিনি সাভারের বাটপাড়া রেডিও কলোনিতে সন্তানদের নিয়ে থাকেন। মারা যাওয়া শিশুর নাম আহামেদ।
র্যাব জানিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে আয়েশা ও তার যমজ সন্তানকে ভাগিয়ে আনে দালালরা। এই দালালরাই রাজধানীর বড় ও স্বনামধন্য হাসপাতালগুলো থেকে রোগী নিয়ে এসে গোলাম সরোয়ারের হাসপাতালে ভর্তি করাত। এতে ভালো অঙ্কের একটা কমিশন পেত দালালরা।
মালিক গোলাম সরোয়ারকে গ্রেপ্তারের পর র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, হাসপাতাল পরিচালনার বিধি মোতাবেক সার্বক্ষণিক তিনজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এতে ছিল একজন। হাসপাতালটিতে দুটি আইসিইউসহ ৩০টি বেডের অনুমোদন থাকলে এতে ছয়টি আইসিইউ (৪টি আইসিইউ বেশি; তন্মধ্যে ভেন্টিলেটর রয়েছে ২টি), ৯টি এনআইসিইউ থাকলেও ইনকিউবেটর ছিল একটি ও ১৫টি সাধারণ বেড রয়েছে। মূলত আইসিইউকেন্দ্রিক ব্যবসার ফাঁদ তৈরি করে সে অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছিল।
অনুমোদনের তুলনায় বেশি আইসিইউ বেড বসানো থাকলেও এই সেবা দেয়ার মতো কোনো চিকিৎসক ছিল না বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অসৎ উদ্দেশ্যে আইসিইউ, এনআইসিইউ বেড রাখলেও চিকিৎসক ছিল না।’
র্যাব জানায়, গোলাম সরোয়ার ২০-২২ বছর ধরে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ পর্যন্ত তিনি ছয়টি প্রতিষ্ঠান বদল করেছেন। কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-অবহেলার অভিযোগ উঠলে তা বন্ধ করে নতুন এলাকায় নতুন হাসপাতাল খুলে ব্যবসা করেছেন গোলাম সরোয়ার।
তিনি কীভাবে একের পর এক প্রতিষ্ঠান চালু করে অনিয়ম, অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা করে যাচ্ছেন, তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর খতিয়ে দেখবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানায় র্যাব। মামলার তদন্তেও এসব বিষয় উঠে আসবে বলে জানান র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন।