দেশকে প্রোডাকশন হাব (পণ্য উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল) হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবসা-বিনিয়োগের স্বার্থে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি মিশনগুলোকে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি মিশনপ্রধান ও রাষ্ট্রদূতদের ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের সব ধরনের সহায়তার নির্দেশনাও দিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে খ্রিষ্টীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ নির্দেশনা দেন।
‘বিশ্বের বড় বড় দেশ তাদের নিজ দেশের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রদূতদের কাজ করার অনুরোধ করে থাকে। আমরা কেন পারব না? আমরা ব্যবসায়ীদের এ ক্ষেত্রে সব সময়ই সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করব’, বলেন মন্ত্রী।
‘আমরা চাই বাংলাদেশ পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে পরিণত হোক। এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতদের সব ধরনের সহযোগিতায় প্রস্তুত থাকতে হবে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজে লাগাতে নতুন ক্ষেত্র সন্ধান করতে হবে। আফ্রিকায় জমি লিজ নিয়ে চাষ করতে হবে। এ জন্য রাষ্ট্রদূতদের এগিয়ে আসতে হবে’, যোগ করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধু বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মহান কূটনীতিক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার কূটনৈতিক দূরদর্শিতা থেকেই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি করেছিলেন ‘সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরিতা নয়।’”
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশের সব দূতাবাসে হাসিমুখে সেবা দিতে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশ মিশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের দুর্ব্যবহার না করেন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দেন মোমেন।
ওই সময় বাংলাদেশের সব দূতাবাসে সেবার গুণগত মান বাড়ানোরও নির্দেশনা দেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল বুধবার বিদেশে বাংলাদেশের একটি মিশন সম্পর্কে বড় অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের কোনো মিশনে একজন কেউ যাচ্ছিল, সে আবার একটা অন্য ধরনের কাপড় পড়ে ছিল; সাধুর কাপড়। সে জন্য তাকে মিশনে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
‘আমি ঠিক জানি না এ বিষয়ে আমাদের কোনো পলিসি আছে কি না। মিশনে ঢুকতে গেলে নির্দিষ্ট কোনো ড্রেস কোড আছে কি না; আমি জানি না। যারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন তারা বলতে পারেন। দেশে কিন্তু এমনটা নেই। ড্রেস কোড নেই; আমার অফিসে আসতে হলেও। এটা তারা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছে, তাদের ড্রেস কোডের জন্য ঢুকতে দেয়া হয়নি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে বাংলাদেশিরা জেলে আছেন। আমি জেনেছি ভারতীয় বন্দিদের সেই দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা ছাড়িয়ে নিয়ে যায়, কিন্তু বাংলাদেশের কেউ আসে না। এটি আমার শুনতে ভালো লাগেনি।’
তিনি ট্রাভেল ডকুমেন্ট জোগাড় করে বন্দিদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দেন। ড. মোমেন তাদের আইনি সহায়তা দেয়ার কথাও বলেন।
মোমেন বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মাধ্যমে দেশের জনশক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে বিদেশে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যেও কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে বাংলাদেশ মিশনগুলোর কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে প্রযুক্তি স্থানান্তরেও ভূমিকা রাখতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে, বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশে থাকতে এবং মিশনগুলোতে সেবার মান বাড়াতে সেখানে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
সভায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশেদ আলম, সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী, সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস, বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন।