কম দামে মাংস বলতেই ছিল ব্রয়লার মুরগি। সেটিও গত কয়েক সপ্তাহ থেকে ২০০ টাকা কেজি ছাড়ায়। সেই সঙ্গে বাড়তি ছিল সোনালি মুরগির দামও। তবে শুক্রবার বাজার পরিস্থিতি যা, তাতে ক্রেতারা কিছুটা হলেও স্বস্তি নিয়ে বাজার করতে পেরেছেন।
এদিন ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা কেজিতে। আর সোনালি মুরগি ৩৫০ টাকা কেজি থেকে কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজি।
অবশ্য সবজির ভরা মৌসুম হলেও এবার কিছুটা চড়া বাজার। কয়েক দিন আগে যে শিম বাজারে ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। বাড়তি রয়েছে লাউ, কপি, ব্রকলি, টম্যাটোর দামও।
শুক্রবার রাজধানীর খিলগাঁও, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে বিভিন্ন পণ্যের দামের আগের সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. আলম বলেন, ‘শীতের সময় ব্রয়লারের দাম স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি থাকে। সরবরাহও কম থাকে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় মুরগির দাম কিছুটা কমেছে।’
একইভাবে সোনালি মুরগির দাম কমার কথাও জানান তিনি।
দাম কমার কারণ হিসেবে আলম বলেন, ‘গত সপ্তাহে সরবরাহ কম ছিল। এখন আবার বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম কমায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।’
এদিকে গত সপ্তাহে হঠাৎ করে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার খবর আসে সংবাদমাধ্যমগুলোয়।
ব্যবসায়ীরা এককভাবে তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। লিটারে আট টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব গত বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে বাতিল করার পর স্বস্তি ফিরেছে ক্রেতাদের মধ্যে।
মালিবাগ কাঁচাবাজারে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা লিটার। কেনাকাটার সময় ক্রেতা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘শোনা যাচ্ছিল সয়াবিন তেলের দাম আবারও বাড়ানো হবে। এটি করা হলে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৬৮ টাকা। কিন্তু সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দেয়ায় ভালো হয়েছে।
‘চারদিকে সবকিছুর দাম বাড়তি। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিংয়ের যে ব্যবস্থা ছিল সেটিও দেখা যায় না। ফলে বিক্রেতা আজ এক কথা, কাল আরেক কথা বলে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন।’
একই বাজারের বিক্রেতা আশরাফুল বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে খুচরা বাজারে দাম বাড়বেই। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পাইকারি বাজারে দাম কমলে, অন্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় সে দাম আর কমানো হয় না। লেবার খরচ, পরিবহন খরচ, দোকান ভাড়া- সব হিসাব করলে ব্যবসায় এখন লাভ খুবই কম।’
শীতে সবজির জোগান বাড়লেও সে অনুযায়ী শীতের সবজির দামে খুব বেশি সুবিধা পায়নি ক্রেতা। বাজারে এখনও প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৩৫-৪০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা কেজি, শিম ৫০ টাকা; বড় বিচিসহ বা নরসিংদীর শিম বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা কেজিতে।
এ ছাড়া এই সময়ে ভালো শালগম ও ব্রকলি পাওয়া গেলেও সেগুলোর দাম নাগালের বাইরে। শালগম ৫০ টাকা, আর ব্রকলি ৫০-৬০ টাকা পিস।
অবশ্য বাজারে আলুর দামে হেরফের হয়নি। আগের সপ্তাহে ৩৫ টাকা কেজির দেশি আলু এ সপ্তাহেও সমান দামেই বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচবাজারে পাকা টম্যাটোর কেজি ৫০-৬০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
শাকজাতীয় খাদ্যের মধ্যে লালশাক, মুলাশাক ১৫ টাকা আঁটি, পালংশাক ৩০ টাকা, মেথিশাক ২০ টাকা, ডাটাশাক ২০ টাকা আঁটিতে বিক্রি হচ্ছে।
খাদ্যপণ্যের বাজারে সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত সপ্তাহের তুলনায় সরু চাল (নাজির/মিনিকেট) ৫৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৮ টাকা। মাঝারি মানের চাল (পাইজাম/লতা) ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৬ টাকা। স্বর্ণা ও চায়না ইরি জাতের মোটা চলের দাম ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৮ টাকা।
বাজারে খোলা আটার দাম আগের সপ্তাহের মতোই অপরিবর্তিত আছে। তবে প্যাকেট আটার দাম ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকা হয়েছে। খোলা ময়দার দাম ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা হয়েছে। প্যাকেট ময়দার দাম আগের সপ্তাহের মতো ৫০ টাকায় স্থির আছে।
পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। দেশি পেঁয়াজের দাম আগের সপ্তাহের ৫৫ টাকা থেকে ৫০ টাকায় নেমেছে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৪৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা হয়েছে।
দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, আমদানি করা রসুন ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজিতে।
মাছের বাজারে রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি। ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি, কাতল ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি।
টাকি মাছ ৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ টাকা, পাঙাশ ১৩০ টাকা, শোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজিতে।