চট্টগ্রামের একটি সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন রফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগি গ্রামে। ৯ বছর ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছেন তিনি। ডায়ালাইসিস করে বেঁচে আছেন বলা যায়।
আড়াই বছর ধরে স্বল্প খরচে এই সেবা নিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। কিন্তু গত ৪ জানুয়ারি সেখানে হঠাৎ করে ডায়ালাইসিস বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
৬ জানুয়ারি হাসপাতালে সেবা নিতে এসে এ খবর শুনতে পেয়ে মাথায় বাজ পড়ে তার। যদিও অনেক চেষ্টার পর সেদিন ডায়ালাইসিস করাতে পেরেছিলেন তিনি। তবে ৫ জানুয়ারি থেকে ডায়ালাইসিস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সিরিয়ালে থাকা অসংখ্য রোগী।
রফিকুল ইসলাম জানান, ডায়ালাইসিস করতে এখানে খরচ পড়ে এক হাজার ৫৩০ টাকা। বাইরে করাতে গেলে যা ১০ হাজার টাকারও বেশি খরচ হয়। যা এখানকার চেয়ে প্রায় সাত গুণ বেশি। এত টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস করা তার পক্ষে সম্ভব না বলে জানান তিনি।
শুধু রফিকুল ইসলাম নন, ডায়ালাইসিস করার অপেক্ষায় ছিলেন আরও ২০ থেকে ২১ জন রোগী।
তাদের মধ্যে ৭২ বছরের আবুল কাসেম বলেন, ‘১১ বছর ধরে ডায়ালাইসিস করে বেঁচে আছি। এতদিনে অনেক টাকা খরচ হয়েছে এটি করতে। তবে তিন বছর ধরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অল্প টাকায় ডায়ালাইসিস করে আসছি। এখন হঠাৎ করে এটি বন্ধ হওয়াতে আবারও অনেক টাকা খরচ করতে হবে। তাই খুব বিপদে পড়েছি।’
বোয়ালখালী উপজেলার রঘুনাথ দত্ত বলেন, ‘প্রতিমাসে ৮ থেকে ৯ বার ডায়ালাইসিস করাতে হয়। ধারদেনা করে খরচ মেটাই। এখানে দরিদ্র কোটায় প্রতিবার ডায়ালাইসিসে খরচ দিতে হয় ৫১০ টাকা।
‘এখন সেবাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে শঙ্কায় আছি। কারণ বাইরে চিকিৎসা করানোর মতো এত টাকা আমার নেই।’
এ সময় ডায়ালাইসিসের জন্য অপেক্ষায় থাকা অনেক রোগী জানান, এখানে অনেক দরিদ্র রোগী আছেন, যারা নামমাত্র টাকা দিয়ে ডায়ালাইসিস করে বেঁচে আছেন। তাই এখানে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ হলে চিকিৎসার খরচ মেটাতে না পেরে হাজারো কিডনি রোগী মারা যাবে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচ জানুয়ারি থেকে ডায়ালাইসিস বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ছবি: নিউজবাংলা
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় চালু করা হয় ৩১ বেডের স্যান্ডর ডায়ালাইসিস কেন্দ্র। সেখানে হাসপাতালের ২০ শয্যার রোগীরা ছাড়াও রেফার করা বাইরের রোগীদেরও ডায়ালাইসিস হয়।
তবে কাঁচামাল ও সরঞ্জাম না থাকায় হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস কার্যক্রম ৫ জানুয়ারি থেকে বন্ধ ঘোষণা করে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস (প্রা.) লিমিটেড। এ জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে রোগীদের প্রতি অনুরোধ জানায় তারা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আফতাব উল ইসলাম বলেন, ‘স্যান্ডরের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী যে পরিমাণ অর্থ দেয়ার কথা ছিল তা পরিশোধ না করায় সেবা বন্ধের ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
‘আমার জানা মতে প্রায় চার কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছি। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা সেবা চালিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’
কিন্তু ভিন্ন কথা জানিয়েছেন ডায়ালাইসিস সেন্টারের ইনচার্জ ডা. হিমেল আচার্য। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ১৫০ রোগী ডায়ালাইসিস করাতে আসেন। মাসে এই সংখ্যা প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার।
‘এ সেবায় গত দুই বছরে প্রায় ২৩ কোটি টাকা বকেয়া। স্বাস্থ্য বিভাগ টাকা পরিশোধের জন্য ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চাওয়ায় সেবা সীমিত চালু রাখা হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না হলে সেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’