চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার একটি ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ইজিলোডের দোকানের কর্ণধার মোহাম্মদ শাহীন। ৩৫ বছর বয়সী এ যুবক একসময় নিয়মিত ধূমপান করতেন। এর পেছনে রোজ তার ব্যয় হতো ৫০ টাকা বা তার বেশি। এতে দোকান থেকে করা আয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ চলে যেত।
শাহীনের ধূমপানের এ অভ্যাস কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না তার স্ত্রী। তিনি বিভিন্ন সময়ে তাকে সিগারেট সেবনে মানা করেছেন। তাতেও ধূমপান ছাড়েননি যুবক, কিন্তু হাল ছাড়েননি তার স্ত্রী।
২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে অযথা ব্যয়ের বিষয়টি তুলে ধরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহীনকে ধূমপান ছেড়ে দিতে বলেন তার স্ত্রী। এতে মন গলে যুবকের। ওই রাতেই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন ধূমপান ছেড়ে দেয়ার। সেই থেকে অদ্যাবধি আর ধূমপান করেননি তিনি।
সাত বছর আগে ধূমপান ছেড়ে দেন মোহাম্মদ শাহীন। ছবি: সংগৃহীত
ধূমপানের অভ্যাস নিয়ে শাহীন নিউজবাংলাকে জানান, পরিবারের প্রয়োজনে ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন দোকানে কাজ করতে হয়েছে। এ কারণে পড়ালেখা হয়নি। দোকানে কাজ করতে গিয়ে ১৬-১৭ বছর বয়সে সিগারেট সেবনের অভ্যাস হয়। এর পর থেকে নিয়মিতই সিগারেট সেবন করতেন তিনি।
দুই সন্তানের এ জনক জানান, বছর সাতেক আগেও তিনি দৈনিক কমপক্ষে ৫০ টাকার সিগারেট সেবন করতেন। এতে দোকানের আয়ের টাকা নষ্ট হতো।
টাকা জমানোর বিষয়ে শাহীন জানান, ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর রাতে তিনি সিগারেট ছাড়ার পরের দিন তার স্ত্রী জানালেন, যে টাকা ধূমপানের পেছনে ব্যয় হতো, সেটা ব্যাংকে রাখবেন তিনি। সে অনুযায়ী প্লাস্টিকের তিনটি রকেট ও দুটি গোলাকার ব্যাংক কেনা হলো। সেগুলোতে ১০, ২০, ১০০, ৫০০ টাকাসহ বিভিন্ন মানের নোট রাখতেন তার স্ত্রী।
এসব ব্যাংকে টাকা জমিয়েছেন শাহীনের স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত
টাকা রাখার পদ্ধতি নিয়ে ফটিকছড়ির এ যুবক জানান, তার স্ত্রী কখনো ৫০ টাকা রাখতেন, কখনো তার কম-বেশি রাখতেন। মাঝে কয়েক দিন টাকা রাখা না হলে একবারে ৫০০ টাকা রাখতেন। এভাবে তিনি তিলে তিলে সঞ্চয় বাড়িয়েছেন।
ব্যাংকগুলো ভেঙে কত টাকা পাওয়া গেছে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে শাহীন জানান, নোটগুলো হিসাব করে পাওয়া গেছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫ টাকা। এর বাইরে এক-দুই টাকার পয়সা হিসাব করলে আরও ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা হবে।
প্লাস্টিকের ব্যাংক ভেঙে বের করা টাকা। ছবি: সংগৃহীত
‘আমি ভাবতেই পারি নাই, এত টাকা হবে’, বলেন উৎফুল্ল শাহীন।
স্ত্রীর কথায় ধূমপান ছেড়ে দেয়া শাহীনের ধূমপায়ীদের উদ্দেশে কোনো পরামর্শ আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয় নিউজবাংলার পক্ষ থেকে। জবাবে স্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘একটা ফ্যামিলির আয় যদি হয় ২০০ টাকা, সেখান থেকে ৫০ টাকা সিগারেটের পেছনে খরচ হলে সংসারে টানাটানি শুরু হবে। এ টাকাটা খরচ না করলে সংসার সুন্দরভাবে চালানো যায়।’