শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সশরীরে ক্লাস বা হল খোলা রাখা যাবে না বলে সতর্ক করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
করোনার সংক্রমণ আবার ক্রমেই বেড়ে চলা, ৯৮ দিনের মধ্যে প্রথমবারের মতো দিনে রোগী শনাক্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে সরকার যখন ফের বিধিনিষেধ দেয়ার কথা বলছে, তখন এই সতর্কতা এলো বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ পরামর্শ দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সশরীরে শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে এই পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে করোনা সংক্রমণের হার আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে আবাসিক হল খোলা রাখা ও সশরীরে শিক্ষাদান কার্যক্রম ব্যাহত হবে।’
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তা নিয়ন্ত্রণে আসে। মার্চের শেষে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসে গত ৪ অক্টোবর। তবে এখন তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা হয়। আবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় যদি সংক্রমণের হার ফের ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর দুই সপ্তাহ এই পরিস্থিতি থাকে, তাহলে করোনার আরেক ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হয়।
প্রথমবার করোনার ইতালীয়, পরে সাউথ আফ্রিকান ধরনে জেরবার ছিল বাংলাদেশ। আরও বেশি প্রাণঘাতী দ্বিতীয় ঢেউয়ে আঘাত হানে ডেল্টা ধরন। এবার উপমহাদেশে আরেক ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী এখনও বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেই। তবে ২৪ ঘণ্টায় রোগীর সংখ্যা ও পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেদিন এই বিজ্ঞপ্তি দেয়, সেদিন পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত ছিল ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এই হার গত ২০ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। সেদিন পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
বুধবার পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, মঙ্গলবার ছিল ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। সপ্তাহ দুয়েক আগেও পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ২-এর কোঠায়। এক মাস আগে তা ছিল ২-এর নিচে।
এই পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। যেহেতু আমাদের হলগুলো খোলা রয়েছে, সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা চলমান থাকবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
করোনার কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গত ৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেয়া হয়। সশরীরে ক্লাস শুরু হয় আরও ১২ দিন পর ১৭ অক্টোবর।
এরই মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সশরীরে ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছে। কেবল পরীক্ষা ও ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া হবে। তবে হল বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নানা বিধিনিষেধের কথা বলছে। দুই টিকা না দিলে এমনকি স্কুলেও ক্লাস করতে না দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে গেলে, যানবাহনে চড়তে গেলেও টিকার কার্ড দেখাতে হবে।
সামাজিক, রাজনৈতিকসহ যেকোনো জমায়েত নিরুৎসাহিত করার বিষয়েও নির্দেশনা জারি হয়েছে।