দেশে অনলাইন প্রতারণায় বাংলাদেশিদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদেশিরাও। এমন এক চক্রের সন্ধান মিলেছে এবার। চক্রটি বিদেশে বসে দেশীয়দের মাধ্যমে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। নিষিদ্ধ অ্যাপে দেশ থেকে টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর কলাবাগান থেকে ওই চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (তেজগাঁও) বিভাগের অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার টিম।
গ্রেপ্তার ফরহাদ হোসেন ওরফে নাজমুল ইসলাম নাইজেরিয়ার নাগরিক গ্রিন স্মিথের একজন সহযোগী। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার নারী টেরিলিন এলিয়টের পরিচয় ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করে প্রতারণা করছেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকায় আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে কর্মরত পরিচয় দিয়ে নিষিদ্ধ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ ‘বাইনান্স’ অ্যাপ দিয়ে প্রতারণা করছেন নাইজেরিয়ার এক ব্যক্তি। এ কাজে সাহায্য করেন বাংলাদেশের নাগরিক ফরহাদ।
প্রতারণার কৌশল
গ্রিন স্মিথের ই-মেইলের আইপি অ্যাড্রেস থেকে জানা যায়, তার অবস্থান নাইজেরিয়ায়। তবে তিনি নিজ নামে প্রতারণা না করে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার নাগরিক টেরিলিন এলিয়টের পরিচয় ও তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করেছেন। স্মিথ বিক্রয় ডটকমে পুরোনো মোবাইল, ল্যাপটপ, ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখে বিজ্ঞাপনে থাকা নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন।
যোগাযোগ করে তিনি জানান, তিনি বাংলাদেশে আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে চাকরি করেন। বাংলাদেশে তার এক বন্ধুকে এই পণ্যটি উপহার দিতে চান। বন্ধু কুরিয়ারে পণ্য বুঝে পেয়ে কুরিয়ারের রসিদ তাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালে পেনফিড ক্রেডিট ইউনিয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করবেন।
তবে পণ্য পাঠানোর রসিদ তার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানোর পরে তিনি মূল্য পরিশোধ করেন না। পণ্য বুঝে পাওয়ার জন্য তিনি একটা ঠিকানা দেন। আর সেখান থেকে ফরহাদ পণ্য সংগ্রহ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার নারী টেরিলিন এলিয়টের পরিচয় ব্যবহার করে করা হয়েছে প্রতারণা। ছবি: নিউজবাংলা
বিক্রেতার আস্থা অর্জন যেভাবে
বিক্রেতার আস্থা অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এলিয়টের পরিচয় এবং তার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি পাঠান নাইজেরিয়ার ওই ব্যক্তি। এ ছাড়া তিনি যে বাংলাদেশের আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে চাকরি করেন তা প্রমাণের জন্য সুন্দরভাবে তার ইংরেজি লেখার ধরন দেখান। অন্য ক্রেতাদের চেয়েও তিনি পণ্যের দাম বেশি দেয়ার কথা বলেন।
ফরহাদ প্রতারণায় যুক্ত হয়ে নিষিদ্ধ অ্যাপসে টাকা পাঠাতেন
গ্রিন স্মিথের প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন ফরহাদ নিজেই। পরে স্মিথ ফরহাদকে প্রস্তাব দেন তার সঙ্গে প্রতারণায় যুক্ত হতে। ফরহাদ লোভে পড়ে তার কথায় রাজি হন। স্মিথ ফরহাদকে প্রস্তাব দেন, প্রতারণা করে যে টাকা আয় হবে তার ৩০ শতাংশ ফরহাদ পাবেন, বাকি ৭০ শতাংশ পাবেন তিনি।
গ্রিন স্মিথের অর্ডার দেয়া পণ্য কুরিয়ার থেকে সংগ্রহ করতেন ফরহাদ। সেই পণ্য বিক্রি করে নিষিদ্ধ বাইনান্স অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রিন স্মিথকে টাকা পাঠাতেন ফরহাদ। ফরহাদের মোবাইল ফোনে থাকা বাইনান্স অ্যাপসে দেখা যায়, ২০ বারেরও বেশি এই অ্যাপসের মাধ্যমে তিনি ডলার পাঠিয়েছেন গ্রিন স্মিথের কাছে।
কী বলছে পুলিশ
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (তেজগাঁও) বিভাগের অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ এবং এ বিষয়ে তেজগাঁও থানায় করা একেকজনের মামলার তদন্ত শুরু করি আমরা। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার সকালে ফরহাদ হোসেনকে কলাবাগান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
ফরহাদের মতো কতজন এই প্রতারণায় যুক্ত এবং মূল আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতারক গ্রিন স্মিথের ই-মেইলের আইপি অ্যাড্রেস থেকে জানতে পেরেছি তার অবস্থান নাইজেরিয়ায়। তিনি সব সময় হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেছেন।
‘গ্রেপ্তার ফরহাদকে দিয়ে ভিডিওকলে গ্রিন স্মিথের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে মুখে মাস্ক পরে আসেন। পরে তিনি মাস্ক ছাড়া আসলেও মুখের সম্পূর্ণ অংশ দেখাননি। ধারণা করছি, ফরহাদের মতো আরও অনেকে গ্রিন স্মিথের সঙ্গে এই প্রতারণায় যুক্ত আছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।’