সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান।
রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে দায়ের হওয়া জিডিতে মুরাদের বিরুদ্ধে মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে।
মুরাদের স্ত্রীর কল পেয়ে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। তারা ডা. মুরাদ হাসানকে তখন বাসায় পায়নি।
খবর পেয়ে ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম ওই বাসায় গিয়েছিলেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বাসায় পোঁছাই সোয়া ৩টার দিকে। তখন মুরাদ সাহেব বাসায় ছিলেন না।’
ধানমন্ডি থানা পুলিশ জানায়, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মুরাদ হাসানের স্ত্রী জাহানারা এহসানের সঙ্গে কথা বলে। তারা অভিযোগ শোনেন এবং ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে থানায় জিডি করার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যার কিছু আগে জাহানারা এহসান পুলিশের গাড়ির সঙ্গে পৃথক গাড়িতে ধানমন্ডি থানায় আসেন।
জিডি প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক রাজিব হাসানকে।
স্ত্রীর জিডিতে যত অভিযোগ
সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন জাহানার এহসান। ওই জিডির একটি কপি নিউজবাংলার হাতে এসেছে। এতে তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিবাদী ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে ১৯ বছর আগে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি। বিবাহিত জীবনে আমাদের সংসারে মেয়ে রামিসা ফারিহা রাজকন্যা ও ছেলে হাসান আবরার মাহির যুবরাজ রয়েছে। বিবাদী আমার স্বামী।
‘তিনি একজন সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী। তিনি কারণে-অকারণে আমাকে এবং সন্তানদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছেন। হত্যার হুমকিও দিয়ে আসছেন।’
মুরাদের স্ত্রী জিডিতে উল্লেখ করেন, ‘আজ ৬ জানুয়ারি আনুমানিক বেলা পৌনে ৩টার দিকে বরাবরের মতোই তিনি আমাকে ও আমার সন্তানদের গালিগালাজ করেন এবং মারধর করতে উদ্যত হলে আমি ৯৯৯ নম্বরে কল করি। ধানমন্ডি থানা পুলিশ বাসার ঠিকানায় পৌঁছালে বিবাদী বাসা থেকে বের হয়ে যান। এ অবস্থায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি। বিবাদী যেকোনো সময় আমার ও আমার সন্তানদের ক্ষতি করতে পারেন।’
অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভুক্ত হওয়ার পর থানা থেকে চলে যান মুরাদের স্ত্রী। থানা থেকে বের হলেও রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তিনি ধানমন্ডির বাসায় ফেরেননি।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই বাসায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সুমন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্যার বাসা থেকে কখন বের হয়েছেন আমি দেখিনি। ম্যাডাম পুলিশ আসার পর বেরিয়ে গেছেন। এখনও ফেরননি।’
ডা. জাহানারা এহসানের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে সেটি ব্যস্ত পাওয়া যায়। এরপর একাধিকবার ফোন রিসিভ করলেও প্রতিবারই কেটে দেয়া হয়।
সাধারণ ডায়েরিটি প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক রাজিব হাসানকে।
তদন্ত শেষে প্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার এহসানুল ফেরদৌস।
ভার্চুয়াল টকশোতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে অশালীন মন্তব্যের পর এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে মুরাদের অশালীন বক্তব্যের অডিও ফাঁস হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ৭ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন মুরাদ। পরে আওয়ামী লীগের পদও হারান তিনি। অবশ্য তার সংসদ সদস্য পদ টিকে আছে।
এরপর ৯ ডিসেম্বর রাতে তিনি কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ইকে ৮৫৮৫-এ তিনি প্রথমে দুবাই যান। এরপর সেখান থেকে আরেকটি ফ্লাইটে কানাডার উদ্দেশে যাত্রা করেন।
তবে টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয় কানাডীয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিউজবাংলাকে জানায়, করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার কারণেই মুরাদকে কানাডার ইমিগ্রেশন ফিরিয়ে দেয়।
মুরাদ হাসান এরপর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঢোকার চেষ্টা করেন। তবে ভিসা না থাকায় দুবাইয়ে ইমিগ্রেশনও আটকে দেয় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে।
দুবাইয়ে প্রবেশে ব্যর্থ হওয়ার পর ১২ ডিসেম্বর ঢাকা ফিরে আসেন মুরাদ হাসান।