বুধবার মধ্যরাতে অটোরিকশাচালক বাহার মিয়ার কাছে মামাশ্বশুরের মৃত্যুসংবাদ আসে। সকালে স্ত্রী, ছোট মেয়ে আর শাশুড়িকে নিয়ে রওনা দেন ফেনীতে। বাড়িতে রেখে যান আরও তিন মেয়েকে।
তবে মৃত সেই আত্মীয়কে আর দেখতে যাওয়া হলো না বাহার মিয়ার। পথে বিআরটিসি বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেছে তাদের চারজনেরই।
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার কালিয়াচৌ এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
লাকসাম হাইওয়ে ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আহমেদ জানান, নোয়াখালী থেকে কুমিল্লায় আসা বিআরটিসির একটি বাস অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে বাহার মিয়া ও তার শাশুড়ি গোলাপ নাহার নিহত হন।
আহত পারুল বেগম ও তার এক বছরের মেয়ে জান্নাতুল মাওয়াকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। অটোরিকশার চালক এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
লাকসাম হাইওয়ে থানায় কথা হয় বাহার মিয়ার বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে। নানা ও ছোট বোন আয়েশাকে নিয়ে স্বজনদের লাশ নিতে এসেছেন মাদ্রাসার আলিম শ্রেণির এই ছাত্রী।
ফাতেমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি লালমাই উপজেলার ভুলুইন এলাকায়। রাতে আমরা সবাই একসঙ্গে খেয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। মাঝরাতে ফোনে সংবাদ পাই আমাদের এক নানা সামছুল আলম মারা গেছেন। তাদের বাড়ি ফেনীর কামার পুকুরিয়া এলাকায়।
‘ভোর ৬টার দিকে আম্মা, আব্বা, নানু আর আমার ছোট বোন ফেনীতে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়। মাদ্রাসা খোলা থাকায় আমি আর আমার ছোট দুই বোন মরিয়ম, আয়েশা বাড়িতেই থেকে যাই। ৮টার সময় খবর পাই সবাই মারা গেছে।’
ফাতেমার প্রশ্ন, ‘আমরা তিন বোন এখন কীভাবে দিন পার করব? আমাদের তো কেউ থাকল না।’
বাহারের চাচাতো ভাই ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ভোরবেলা অ্যাকসিডেন্টে ভাবিসহ আমার ভাইডা মইরা গেল। অহন ভাতিজি তিনডার কী হইব? আমরা হুনছি বাসের দোষ আছিল। আমরা বাসের বিরুদ্ধে মামলা কইরাম।’
লাকসাম হাইওয়ে থানার পরিদর্শক মাকসুদ আহমেদ জানান, বাসটি জব্দ করে থানায় রাখা হয়েছে। তবে চালক পালিয়ে গেছে। এ বিষয়ে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।