রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীকে মারপিটে অভিযুক্ত রেলকর্মী মেহেদি হাসান রাসেলকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি রাজশাহী স্টেশনের টিকিট কালেক্টর (টিসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে তাকে বরখাস্ত করার আদেশ দেয়া হয়েছে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আব্দুল করিম নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, স্টেশনের ভেতরে এক যাত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণের একটি ভিডিও ক্লিপ রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তের আদেশে সই করেছেন পশ্চিম রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন। এরই মধ্যে অভিযুক্ত মেহেদিকে এই আদেশ সম্পর্কে জানানো হয়েছে। তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এর আগে এই ঘটনা তদন্তে ‘পশ্চিম রেলওয়ের ডেপুটি সিসিএম গৌতম কুমার কুন্ডুকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে মঙ্গলবার দুপুরে রেলকর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হন এক যাত্রী। ওই যাত্রী আনসার সদস্য। তার নাম রুবেল। রুবেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার খেসবা গ্রামের মন্টুর ছেলে। তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনসার সদস্য হিসেবে কর্মরত।
রুবেল জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পৌঁছান। স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় একজন নারী রেলকর্মী তাকে টিকিট দেখাতে বলেন।
‘‘আইডি কার্ডে আমার বানান ‘আর ইউ বি ই এল’ কিন্তু রেলওয়ের অনলাইন রেজিস্টেশনের সময় ভুলবশত নামের বানানে ‘ আর ইউ বি এ এল ’ আছে। এ নিয়ে রেলকর্মী রাসেলের সাথে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। এবং তাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে মারপিট করেন রাসেল।
রুবেলকে ধাক্কাধাক্কি ও চড়-থাপ্পড় মারার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে বুধবার। ২ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে একাধিকবার রুবেলকে মারপিট করতে দেখা গেছে।
কথোপকথনে শোনা যাচ্ছে রেলকর্মী চিৎকার করছেন।
রাসেল: এই আইডি কার্ড, এই আইডি কার?
রুবেল: আমার আইডি।
রাসেল: চিল্লাচ্ছিস ক্যান। এই চিল্লাচ্ছিস ক্যান?
এরপরই রুবেলকে তিনি থাপ্পড় মারেন।
রুবেল: আমাকে মারলেন কেন আপনি? আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ডাক দেন। আপনি আমাকে মারলেন কেন?
উপস্থিত অন্যদের রুবেল বলেন, উনি আমাকে মারলেন।
রুবেল: আমার আইডি কার্ড সবই ঠিক আছে। আপনারা গায়ে হাত তুললেন কেন বলেন?
রাসেল: তুই অত চিল্লালি কীসের জন্য। এই চিল্লালি কেন?
এই বলেই আবারও দুটি ঘুসি মারেন রাসেল। তিনি বারবার বলতে থাকেন, তুই চিল্লালি কীসের জন্য? এ সময় ওই ঘরের অন্য রেলকর্মীরা তাকে মারধর করা থেকে আটকানোর চেষ্টা করেন।
রুবেল: আমাদের স্টাফ আছে এখানে।
রেলকর্মী রাসেল চিৎকার করে ওঠেন।
রাসেল: তোর বাপ থাক। তোর চাকরি করি আমি? এই বলে গালি দেন। বলেন, চাঁপাইয়া কোথাকার। চাঁপাইয়ের কোন বাপ আছে ডাক। তুই তোর স্বভাবের জন্য মার খাইছিস।
এরপরও তিনি চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় নারী রেলকর্মী পুতুলেরও কথা শোনা যায়। কয়েকবার তিনিও তার স্বামীকে থামানোর চেষ্টা করেন।
পশ্চিম রেলেওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রেলওয়ের কেউ কোনো যাত্রীকে মারতে পারে না। এটার সুযোগ নেই। আমি এটি শোনার পর এবং ভিডিওটি দেখার পর একটি তদন্ত কমিটি করেছি। ‘পশ্চিম রেলওয়ের ডেপুটি সিসিএম গৌতম কুমার কুন্ডুকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ভিডিওতে বোঝা যাচ্ছে সেখানে ধস্তাধস্তির একটা ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত জানার জন্য কমিটি করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’