দেশে শীতের মৌসুমে পিঠা-পায়েসের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের গুড়। এর বাইরেও সারা বছর এ গুড় খেয়ে থাকেন অনেকে। খেজুরের রস থেকে কীভাবে পণ্যটি তৈরি হয়, তা নিয়ে আগ্রহ আছে অনেকের। জানার সে ক্ষুধা মেটাতে নিউজবাংলা কথা বলেছে সিরাজগঞ্জভিত্তিক অনলাইন শপ দেশির প্রতিষ্ঠাতা হাসানুল বান্নার সঙ্গে।
তিনি জানিয়েছেন, গাছের রস ধারণ থেকে শুরু করে জমাট বাঁধার আগ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে তৈরি হয় গুড়।
এ উদ্যোক্তার ভাষ্য, শুরুতে খেজুরগাছে উঠে ডালপালা ছাঁটাই করেন গাছিরা। পরে তারা গাছের বুক চিড়তে শুরু করেন। আধা হাতের মতো জায়গায় বাকল তুলে ফেলেন তারা। এভাবে সাত দিন রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে ছাল তুলে ফেলা জায়গাটা শুকিয়ে যায়।
বান্না জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ে গাছে উঠে একই জায়গা আবার কাটতে শুরু করেন গাছিরা। সাধারণত দ্বিতীয়বার কাটার পর গাছ থেকে রস বের হয়। রস বের না হলে পরের দিন আবার তা কাটা হয়।
তৃতীয় পর্যায় নিয়ে দেশির প্রতিষ্ঠাতা জানান, রস এলে হাঁড়ি নিয়ে খেজুরগাছে ওঠেন চাষিরা। তারা দড়ি দিয়ে হাঁড়িটি গাছের ছাল ছাড়ানো অংশের একটু নিচের দিকে বাঁধেন। নিচের সে অংশ থেকে হাঁড়ি পর্যন্ত দূরত্বে এক টুকরা বাঁশ দেয়া হয়। বাঁশের সে টুকরা দিয়ে ওপর থেকে গড়িয়ে রস পড়ে হাঁড়িতে।
বান্না জানান, গাছিরা সন্ধ্যার আগে কোনো এক সময় গাছে হাঁড়ি বাঁধেন। পরের দিন সকাল সকাল তারা হাঁড়ি নামিয়ে ফেলেন। পরে আরেকটি হাঁড়ি গাছে বেঁধে দেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, দুপুরের পর থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত জমা রস দিয়ে আসল গুড় হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যে রস হয়, সেটার গুণগত মান ভালো থাকে না। এ দিয়ে নিম্নমানের গুড় তৈরি করে বাজারজাত করেন অসাধু কারবারিরা।
পঞ্চম পর্যায়ে নামানো রস বড় কলসিতে ছেঁকে ঢালা হয়। এরপর সে রস মাটির চুলার ওপর রাখা চতুর্ভুজ আকৃতির বড় তাওয়া বা পাত্রে ঢালা হয়। জমাট বেঁধে গুড়ের উপযোগী হওয়ার আগ পর্যন্ত রস দুই থেকে তিন ঘণ্টা জাল দেয়া হয়।
বান্না জানান, রস তাওয়ায় থাকার সময় একটু পরপর ফেনা জমে যায়। জাল দেয়া ব্যক্তি সে ফেনা তুলে ফেলে দেন। একই সঙ্গে বাষ্পীভূত হওয়ায় রসের পরিমাণও কমতে থাকে।
তিনি আরও জানান, জাল দেয়ার সময় বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধরনের লাকড়ি ব্যবহার করেন। কেউ কেউ খেজুরের ডাল ব্যবহার করেন। কেউ আবার পাটখড়ি বা অন্য কোনো লাকড়িকে জ্বালানি বানান।
ষষ্ঠ পর্যায়ে তাওয়ায় আধা ঘণ্টা ধরে রস ঠান্ডা করা হয়। ঠান্ডা হয়ে গেলে রস কমে তাওয়া বা পাত্রের এক অংশে থাকে। সেখান থেকে জাল দেয়া ব্যক্তি একটু রস আলাদা করে নিয়ে তাওয়ায় ঘষতে থাকেন। এতে রসের রং সাদা হয়ে যায়।
সাদা এ অংশটাকে বীজ বলা হয়। এ বীজ রসকে গাঢ় করতে সাহায্য করে। এ কারণে বীজ বানিয়ে তা আবার রসের মধ্যে নাড়া হয়। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় খেজুরের গুড়।
সপ্তম পর্যায়ে লাল রং ধারণ করা রস বড় গোলাকার একটি মাটির পাত্র বা গামলায় রাখা হয়। সেখান থেকে ফয়েল পেপারে কিংবা বিভিন্ন ফর্মায় ফেলে গুড়ের বিভিন্ন আকৃতি দেয়া হয়।
পরবর্তী সময়ে এসব গুড় বাজারজাত করা হয়।