বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হানিফের আসনে নৌকার ৩ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত

  •    
  • ৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১৪:৪২

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের সংসদীয় এলাকায় এখন দল আগের তুলনায় শক্তিশালী। সেখানে নৌকার প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী বলছেন, ‘নেতাদের সমন্বয়ের অভাবেই এমন ফল হয়েছে।’

পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে ১১৪, ১৭৭ ও ২৩২টি।

এমন বিপর্যয়ের জন্য প্রার্থীরা দুষছেন দলের নেতাদের বিরোধকে। আর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

এ ধাপে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ১১ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট হয়। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে মাত্র একটিতে জিতেছে নৌকার প্রার্থী। আটটিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। বাকি দুটির মধ্যে একটি গেছে জাসদের ঘরে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীও আছেন বিজয়ীর তালিকায়।

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০-এর ৪৪ (৩) ধারায় বলা হয়েছে- কোন প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের এক-অষ্টমাংশ অপেক্ষা কম পেলে তার জামানতের অর্থ সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।

কুষ্টিয়া সদরের বটতৈল ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মোমিন মণ্ডল নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন মাত্র ১১৪টি। এই ইউনিয়নে ২৬ হাজার ৪৭০ ভোটের মধ্যে ২০ হাজার ৭০৯টি ভোট পড়ে।

বিধিমালা অনুসারে এক-অষ্টমাংশ ভোট হয় ২ হাজার ৫৮৯টি। এই ইউনিয়নে আটজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে নৌকার প্রার্থী মোমিন মণ্ডলের অবস্থান পঞ্চম। দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান মিন্টু ফকির ঘোড়া প্রতীকে ৮ হাজার ৬ ৮২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

এই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মোমিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মজিদ বাবলু সম্পর্কে বেয়াই। এই সম্পর্কের সূত্রে মোমিন ভোটের তিন দিন আগে চশমা প্রতীকের প্রার্থী বাবলুকে সমর্থন দেন বলে প্রচার আছে। তবে তারা দুজনই বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

নৌকার পরাজিত প্রার্থী জেলা কৃষক লীগের সভাপতি মোমিন মণ্ডল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা দলের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে ভোট করতে শুরু করেন। এ অবস্থায় ভোটের দুদিন আগে আমি হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম।’

আফসোস করে তিনি বলেন, ‘দলীয় নেতারা কেউ আমার সঙ্গে ছিলেন না। দলের নেতারা যদি দলের ভোট না করেন, তাহলে আমার কী করার আছে।’

বটতৈল ইউনিয়নে গত ২১ ডিসেম্বর ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মিন্টু ফকিরের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর মিন্টুর সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করে ব্যাপক শক্তি প্রদর্শন করে। সেই ঘটনার পর থেকেই মূলত নৌকার প্রার্থী কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

এ ছাড়া ২৫ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নেতা ওমর ফারুকের একটি ভিডিও ফাঁস হয়। সেখানে তিনি নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে ভোট করার নির্দেশ দেন। জানান, এটা ‘নেতার সিগন্যাল’।

আলামপুর ইউনিয়নেও নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নান বিশ্বাস নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন মাত্র ১৭৭টি। এ ইউনিয়নে মোট ভোট পড়েছে ১৮ হাজার ২৭৪টি।

এখানেও বিজয়ী হয়েছেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আখতারুজ্জামান বিশ্বাস। চশমা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৯ হাজার ৫০৮ ভোট। এই ইউনিয়নে ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে নৌকার প্রার্থীর অবস্থান পঞ্চম।

কম ভোট পাওয়ার বিষয়ে প্রার্থী আব্দুল হান্নান বলেন, ‘দলের ভেতরে সমস্যা আছে। এ ছাড়া মেম্বার ভোটের ছকে কম ভোট হয়েছে।’

ভরাডুবি নিয়ে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখন অভিযোগ করে আর কী করব? কিছু করার নেই, অভিযোগ করছি না।’

হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম সম্পা মাহমুদ পেয়েছেন ২৩২ ভোট। এ ইউনিয়নে ১৯ হাজার ২৮০ ভোট পড়েছে। এখানে জাসদ সমর্থিত এম মোস্তাক হোসেন মোটরসাইকেল প্রতীকে ৮ হাজার ৮৮৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এখানেও পঞ্চম হয়েছেন নৌকার প্রার্থী। জামানত ধরে রাখতে তাকে পেতে হতো আরও ২ হাজার ৪১০ ভোট।

এই ইউনিয়নে নৌকার পরাজিত প্রার্থী ও বিজয়ী প্রার্থী সম্পর্কে দেবর-ভাবি। প্রচার আছে ভোটের তিন দিন আগে সম্পা তার দেবরকে সমর্থন দিয়ে দেন। এ কারণে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুর রশিদের পক্ষে কাজ শুরু করেন। যদিও এসব কথা অস্বীকার করেন সম্পা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন মণ্ডল।

পরাজিত প্রার্থী সম্পা মাহমুদ বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ের দলীয় নেতারা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করায় ভোটের এমন ফল হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের সংসদীয় এলাকায় এখন দল আগের তুলনায় শক্তিশালী। সেখানে নৌকার প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী বলেন, ‘নেতাদের সমন্বয়ের অভাবেই এমন ফলাফল হয়েছে।’

এর আগে গত ১১ নভেম্বর মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী শারমিন আক্তারেরও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৪২৭ ভোট। অথচ ভোট পড়েছিল ২৪ হাজার ৮৩২টি। তিনি স্বাধীনতাবিরোধীর মেয়ে বলে আওয়ামী মহলে সমালোচিত হন।

এ বিভাগের আরো খবর