করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেয়ার সার্টিফিকেট ছাড়া রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া, শপিং কমপ্লেক্সে যাওয়া এবং বিমান-ট্রেনে ভ্রমণ করা যাবে না। এমন বাধ্যবাধকতা রেখে দুয়েক দিনের মধ্যে আসছে সরকারি নির্দেশনা।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি আমরা একটি মিটিং করেছিলাম। সেখানে যে বিষয়গুলো পয়েন্ট আউট করা হয়েছে সেটা হলো ভ্যাকসিনটাকে আরও জোরদার করতে হবে। বুস্টারকে আরও কীভাবে আরও ওয়াইডস্প্রেড করা যায় সেটা দেখতে হবে।
‘ওমিক্রনের বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে বলা হয়েছে। আমরা এখন থেকে রেস্টুরেন্ট বা শপিং মল, প্লেন এবং ট্রেনে যারা উঠবে তাদের একটি টাইম দিয়ে ডাবল ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট ছাড়া কাউকে এলাউ করা হবে না। সে রকম একটি চিন্তাভাবনার দিকে যেতে হবে।’
কীভাবে নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হবে, জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মোবাইলে সফট কপি থাকবে বা হার্ড কপি থাকবে। টোটাল পপুলেশন কখনই কোনো দেশে চেক করা সম্ভব না, স্যাম্পল চেক করা হয়। টিম থাকবে প্রতিটি শহরে।
‘প্রত্যেক পৌরসভায় হেলথ ইন্সপেকটর আছে তারা চেক করবে। ল এনফোর্সের লোকজন চেক করবে। এটা একটা সময় দিতে বলা হয়েছে আলাপ আলোচনা করে তারপর এটা করতে হবে। ওমিক্রন ঠেকাতে হলে আমাদের স্ট্রিক্ট ভিউতে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন থেকে রেস্তোরা, শপিং মল, প্লেন, লঞ্চে ট্রেনে ওঠার ক্ষেত্রে ডাবল ভ্যাকসিনেশনের একটি ইমপোজ আসছে। আমরা এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। টেকনিক্যাল লোকজন আছে, দু-একদিনের মধ্যে তাদের সঙ্গে কথা বলে একটা সময় দিয়ে আমরা অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি।
‘বাড়ির বাহিরে কোনো অবস্থাতেই মাস্ক ছাড়া যেতে পারবে না। আমরা এরই মধ্যে এটা বলে দিয়েছি। মোবাইল কোট বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা নিয়ে প্রমোশন ক্যাম্পেইনে কথা বলা হয়েছে। আমাদের ইমাম সাহেবরা যেন খুতবাতেও এই কথাগুলো বলেন।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগম সীমিত রাখতে হবে। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি বাধ্যতামূলক করতে হবে। এটা আমরা কথা বলেছি, আমাদের টেকনিক্যাল লোকেরা অ্যাগ্রি করলে এটা হয়তো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হয়তো একটি রেস্ট্রিকশন দিয়ে দেবে যে, এর বেশি থাকতে পারবে না। নির্বাচনের বিষয়গুলোও আলোচনায় আসবে।
‘বুস্টার ডোজের বিষয়েও কথা হয়েছে। এটাই ৬০ পর্যন্তই রাখা হবে নাকি আরও কমানো হবে সেটা চিন্তা করতে বলা হয়েছে। টিকা আমাদের যথেষ্ট আছে। যারা ফ্রন্টলাইনার তারা সবাই পাবে। স্বাস্থ্য সচিবকে এটা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।’
করোনা সংক্রমণ কমে গেলে গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহনের সীমা বেধে দেয়া হবে বলেও জানান খন্দকার আনোয়ারুল।
তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে যদি করোনা আরও বৃদ্ধি পায়, তাহলে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচলের বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হবে। যদিও এখনও সেটা হয়নি। টিকা সার্টিফিকেট নিয়ে তো যেতে পারবে। এটা আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়া হয়েছে যাতে করে আবার মিটিং করতে না হয়।
‘আমরা বিআরটিএকে বলে দেব, ভাড়া টাড়া বাড়ানো যাবে না। এটা যেহতু একটি স্পেশাল সিনারিও সবাইকেই বুঝতে হবে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা নিয়েই স্কুলে যেতে হবে। টিকা সার্টিফিকেট ছাড়া যাওয়া যাবে না বাণিজ্য মেলা, বইমেলাতেও।
দুই এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করা হবে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
করোনাভাইনাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এবং করোনাপ্রতিরোধী টিকা গ্রহণে উৎসাহী করার লক্ষ্যে মানুষের চলাফেরার ওপর এসব বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহ নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে সে দেশের করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসছে বলে ধরা হয়। সে হিসাবে দেশে করোনা সংক্রমণ হার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও ফের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গত কিছু দিন ধরেই শনাক্ত সংখ্যা ও হার বাড়তির দিকে। ২৪ ঘণ্টার হিসাবে বুধবার করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮৯২ জনের দেহে, যা গত ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এদিন শনাক্তের হার ছিল হার ৪ দশমিক ২০, যা ২৮ সেপ্টেম্বরের পর সবচেয়ে বেশি।
এর মধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনও দেশে শনাক্ত হয়েছে। এই ধরন অনেক বেশি সংক্রামক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই করোনার নতুন ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আগেভাগেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকার।