হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রবেশদ্বারে কোনো যানবাহন না থাকার নিয়ম থাকলেও সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিত্রটি উল্টো। হাসপাতালের প্রবেশদ্বার ও জরুরি বিভাগের সামনেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখছেন সিএনজি ও ইজিবাইক চালকরা।
বেসরকারিভাবে নিয়োগকৃত হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারীদের সহযোগিতায় ইজিবাইক চালকরা রোগীকে যেখানে নামিয়ে দিচ্ছেন ঠিক সেখানেই আবার দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন অন্য যাত্রীরা।
এতে হাসপাতালে রোগীরা পড়েছেন বিপদে। অবস্থা এমন যে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের লাঞ্ছিত করতেও পিছপা হচ্ছেন না চালকরা। এমনকি হাসপাতালের কর্মচারীর হাত ভেঙে ফেলারও অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে।
গত শুক্র, শনি ও রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো ভবন থেকে কাজ গুটিয়ে এখন পুরোদমে চলছে হাসপাতালের নতুন আধুনিক ২৫০ শয্যার ভবন।
আটতলাবিশিষ্ট এই হাসপাতালের প্রবেশ পথ দুটি। নির্ধারিত দুটি মেইন গেট থেকে প্রবেশদ্বারের দূরত্ব ১৫০ থেকে ২০০ মিটার বা তার থেকে একটু বেশি। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স রাখার জন্য নিরাপদ জায়গা থাকলেও ইজিবাইক ও সিএনজি চালকরা গাদাগাদি করে গাড়ি রাখছেন একদম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রবেশ ও অভ্যর্থনা কক্ষের সামনেই।
হাসপাতাল পরিচালকের কড়া নির্দেশনা থাকলেও ২০ থেকে ৩০ টাকার বিনিময়ে সেগুলোর তোয়াক্কাই করছেন না স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে থাকা আউটসোর্সিংয়ের ২-৩ জন কর্মচারী। এলাকাজুড়েই চলে যাত্রী ওঠানামা আর যাত্রীদের ডাকাডাকি।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের পাশেই থাকেন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফয়সল আহমেদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘এটি নিত্যদিনের ঘটনা। রোগীর চেয়ে এখানে সিএনজি আর ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের ভিড় বেশি। আমরা বহুবার এর প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এদের হর্ন আর চিৎকার চেঁচামেচিতে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করা হাসন নগর এলাকার মুজাহিদুর ইসলাম মজনু বলেন, ‘এটি তো দুর্নীতি। মানুষের উপকারের কথা বলে তারা রোগীদের বিরক্ত করছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে এই কাজ করছে। আমরা এর প্রতিবাদ করলে সিএনজি ইজিবাইক চালকরাই তেড়ে আসে।’
এ ব্যাপারে সিএনজি ও ইজিবাইকচালকদের কাছে যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে তারা এর উত্তর দিতে বাধ্য নন বলে জানান। তবে এক ইজিবাইকচালক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। মানুষের উপকারের জন্য আমরা এখানে এসে দাঁড়াই। এখানে গাড়ি রাখতে অনেক সময় সিরিয়ালেও থাকতে হয়।’
তিনি জানান, জায়গাটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের চা-পান খাওয়ার খরচ দিলে সহজেই সিরিয়াল পাওয়া যায়।
সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আনিসুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমি অনেকবার হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটির কাছে প্রস্তাব তুলেছি। এমনকি হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েনের জন্যও অনেকবার বলেছি। আমি নিজে থেকে একবার এক কর্মচারীকে বলেছিলাম, এসব সিএনজি ইজিবাইক সরাতে। তারা সে কর্মচারীকে মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে।’