চা শ্রমিক শ্রাবন্তী উড়িয়া। গত বছরের মার্চে ৯ লিটার চোলাই মদসহ গ্রেপ্তার হন ২৪ বছরের এই নারী। এ ঘটনার মামলায় প্রায় দুই মাস জেল খেটে জামিনে ছিলেন তিনি।
আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করায় মামলার রায়ে শ্রাবন্তীকে গাছ লাগানোসহ পাঁচটি শর্ত পূরণের দণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
একজন প্রবেশন কর্মকর্তা এসব শর্ত পালনের বিষয় তত্ত্বাবধান করবেন।
মঙ্গলবার বিকেলে ব্যতিক্রমী ওই রায় ঘোষণা করেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ জিয়াউল হক।
দণ্ডপ্রাপ্ত শ্রাবন্তী বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের পাথারিয়া চা বাগানের রুবেল উড়িয়ার স্ত্রী।
রায়ে আদালত যেসব শর্ত পালনের কথা উল্লেখ করছেন সেগুলো হলো- তিনি এক বছর প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকবেন। এই সময়ের মধ্যে কোনো অপরাধে জড়াবেন না। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। সদাচরণ করবেন এবং আদালত তলব করলে হাজির হবেন।
এ ছাড়া রায়ের এক মাসের মধ্যে চা বাগান ব্যবস্থাপকের দেখানো স্থানে সাতটি অর্জুন, সাতটি নিম ও সাতটি বাসক পাতার চারা রোপন করবেন শ্রাবন্তী। শুধু তাই নয়, এগুলোর দেখাশুনা ও রক্ষণাবেক্ষণও করবেন তিনি।
কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে প্রবেশন বাতিল এবং দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স-১৯৬০ আইনের ৭ ধারায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, ২০২১ সালের ২২ মার্চ দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের যৌথ এক অভিযানে নিউ সমনবাগ চা বাগানের রাজনগর গ্রামের মিঠুন রাজভরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৯ লিটার চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। এ সময় শ্রাবন্তী উড়িয়াকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম আটক শ্রাবন্তী উড়িয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। প্রায় দুই মাস জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসেন শ্রাবন্তী।
গত সোমবার আদালতে মামলাটির চার্জ গঠনের সময় নির্দিধায় সব দোষ স্বীকার করে নেন তিনি। পরদিন মঙ্গলবার আদালত তাকে পাঁচ শর্তে বাড়িতে থাকার আদেশ দেন। তবে কোনো একটি শর্ত ভঙ্গ করলেই তার প্রবেশন বাতিল হবে।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বড়লেখা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি গোপাল চন্দ্র দত্ত বলেন, ‘বড়লেখায় এই প্রথম এমন ব্যতিক্রমী রায় হয়েছে। এই রায়ের একটা ইতিবাচক দিক আছে। এতে আসামিরা সংশোধনের সুযোগ ও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার একটা পথ পাবেন।’
বুধবার আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আসামি একজন চা শ্রমিক নারী। একটি অনুষ্ঠানের জন্য নিজের ঘরে মদ তৈরি করেছিলেন। দোষ স্বীকার করায় আদালত ব্যতিক্রমী রায় দিয়েছেন। এই রায় একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’