নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে টানা তৃতীয় জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর। গত দুই মেয়াদে যেসব কাজ তিনি করেছেন, এখনও যেসব প্রকল্প চলমান, সেগুলোর কথা তিনি ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন। আর প্রচারে নেমে জনগণের যে প্রতিক্রিয়া তিনি পেয়েছেন, তাতে বিশ্বাস জন্মেছে, আবারও মেয়র হতে যাচ্ছেন তিনি।
বুধবার শহরের বন্দর থানার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন।
জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী আইভী বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন, আমিও প্রচারণা চালাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, আগামী পাঁচ বছরের জন্য জনগণ আমাকেই বিজয়ী করবে। আমি এ শহরে প্রচুর কাজ করেছি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমাকে প্রচুর অর্থ বরাদ্দ করেছেন, যা দিয়ে আমি উন্নয়নকাজ করেছি।’
নারায়ণগঞ্জে প্রত্যাশিত উন্নয়ন হয়নি বলে বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার ও তার সমর্থকদের বক্তব্যেরও জবাব দেন আইভী। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা আমার পক্ষে-বিপক্ষে বলবে এটাই স্বাভাবিক। স্থানীয় সরকারের কাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমি যেভাবে কাজ করেছি, ২৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতেই তা এখন দৃশ্যমান। এ কাজগুলোর মধ্যে মনে হয় না বড় কোনো প্রকল্পের কাজ বাকি আছে। তার পরও প্রত্যেকটি এলাকার চাহিদা অনুযায়ী আমরা কাজ করে দেব।’
২০১১ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আইভীর লড়াই হয় আওয়ামী লীগেরই নেতা শামীম ওসমানের সঙ্গে। তিনি জেতেন এক লাখ ভোটে।
সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউকে সমর্থন না দিয়ে মেয়র পদটি উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। সে সময় বিএনপি সমর্থন দেয় তৈমূর আলম খন্দকারকে। তবে তিনি প্রচার চলাকালে সেভাবে আলোচনায় আসতে পারেননি। আর ভোটের আগের রাতে বিএনপি তাকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
২০১৬ সালে দলীয় প্রতীকে হওয়া দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রতীক তুলে দেয় সাখাওয়াত হোসেন খানের হাতে। কিন্তু তিনিও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি। নৌকার কাছে ধানের শীষের হার হয় ৮০ হাজার ভোটে।
এবার বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ভোজ বর্জন করেছে। তবে তৈমূর প্রার্থী হয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে। দাবি করেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ কেড়ে নিলেও স্থানীয় বিএনপির পুরো সমর্থনই তার প্রতি আছে।
তৈমূরের দাবি, আইভীর আমলে নগরের উন্নয়ন হয়নি। এ কারণে জনগণ ক্ষুব্ধ আর তাকে ভোট দিয়ে তার প্রকাশ ঘটাবে তারা।
আইভী বলেন, ‘এ বন্দরে খেলার মাঠ ছিল না, নতুন প্রজন্মের জন্য আমি এখানে খেলার মাঠ করে দিয়েছি। শিশুবান্ধব ও নারীবান্ধব নগরীর করার কাজ চলমান।’
এবারও নির্বাচিত হয়ে আসলে কী কী করবেন, সেটিও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ নেত্রী। বলেন, ‘বন্দরের কদম রসুলে ১০ থেকে ১২টি খাল রয়েছে, সেগুলো খনন করব। পাশাপাশি নতুন খেলার মাঠ ও পার্ক করে দেব। যেসব মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, সেগুলোও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করব।’
নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের বর্জ্য কি সময়মতো নেয়া হচ্ছে? আমরা বর্জ্য নিতে পারছি ৬০০ টনের মতো। আমাদের সঙ্গে পিডিবির একটি চুক্তি হয়েছে, এই বর্জ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হবে। তখন ময়লার চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। একপর্যায়ে এই শহরে আবর্জনা পাওয়া যাবে না। সুতরাং নগরবাসীকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ সমস্যাটি আর থাকবে না।‘
ভোটে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমূর আলম খন্দকারকে উদ্দেশ করে আইভী বলেন, ‘আমার নির্বাচনে আমার দলের সব নেতাকর্মীই থাকবে। আমি ওনাকে আশ্বস্ত করতে চাই আমি আইন ভাঙব না, উনি যেন বাড়তি কিছু না করে সঠিকভাবে থাকেন।’