বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইলিশ গবেষণার চিত্র পাল্টাতে নামছে জাহাজ

  •    
  • ৫ জানুয়ারি, ২০২২ ১৮:৫০

নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, জাহাজটি দিয়ে মূলত ইলিশের বিচরণ ও প্রজনন কেন্দ্রগুলোর ইকোসিস্টেম, পানির গুণগত মান, মাছের খাদ্যের মতো বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা চালানো হবে। আগে একই কাজ ছোট নৌযান দিয়ে করা হতো। এসব নৌযানে করে ভোলার মনপুরার মতো ইলিশের আবাসস্থলগুলোতে যাওয়া যেত না। এ জাহাজের মাধ্যমে সে বাধা দূর হবে।

ইলিশের আবাস, প্রজননস্থল, নদী ও সমুদ্রের পানির গুণগত মান, খাদ্যের মতো বিষয় নিয়ে গবেষণা চালাতে আগামী সপ্তাহেই কার্যক্রম শুরু করছে একটি জাহাজ।

খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মিত এ জাহাজ ইলিশ গবেষণা সক্ষমতা বাড়িয়ে দেশে এ মাছ উৎপাদনের চিত্র পাল্টে দেবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশে এ ধরনের প্রথম জাহাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. মো. আনিছুর রহমান এবং জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল বাশারের সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। তারা ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে জাহাজটি কী কী ভূমিকা রাখতে পারে, তা তুলে ধরেছেন।

প্রকল্প পরিচালক আবুল বাশার জানান, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতাধীন ‌চাঁদপুরস্থ নদী কেন্দ্রে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালের মে মাসে জাহাজটি নির্মাণ শুরু হয় খুলনা শিপইয়ার্ডে। দুই বছরের মধ্যে এটি নির্মাণের কথা ছিল। শ্রমিকরা রাত-দিন কাজ করে নির্মাণ শেষ করে, তবে করোনা পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণের মতো কিছু কাজ পিছিয়ে পড়ায় জাহাজটি হস্তান্তরে দেরি হয়েছে।

তিনি আরও জানান, জাহাজটি হস্তান্তর হস্তান্তর হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এর মাধ্যমে নদী ও সমুদ্রে গবেষণা শুরু হবে।

কী থাকছে জাহাজে

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম মঙ্গলবার খুলনা শিপইয়ার্ডে উপস্থিত থেকে জাহাজ হস্তান্তর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বাংলাদেশ নৌবাহিনী, নৌপরিবহন অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্সেস, মেরিন ফিশারিজ একাডেমির সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে ইলিশ গবেষণা জাহাজটির প্রাক্কলন প্রণয়ন করা হয়।

ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, গবেষণা জাহাজটিতে ফিশ ফাইন্ডার, ইকো সাউন্ডার, নেভিগেশন এবং অত্যাধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম, ইলিশ গবেষণা ল্যাবরেটরি, নেটিং সিস্টেম, পোর্টেবল মিনি হ্যাচারিসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে।

খুলনা শিপইয়ার্ডের নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি গবেষণা জাহাজটির মাধ্যমে দেশের প্রায় সব নদ-নদী এবং সাগর উপকূলে ইলিশবিষয়ক গবেষণা পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

জাহাজটির মূল কাজ

নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, জাহাজটি দিয়ে মূলত ইলিশের বিচরণ ও প্রজনন কেন্দ্রগুলোর ইকোসিস্টেম, পানির গুণগত মান, মাছের খাদ্যের মতো বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা চালানো হবে। আগে একই কাজ ছোট নৌযান দিয়ে করা হতো। এসব নৌযানে করে ভোলার মনপুরার মতো ইলিশের আবাসস্থলগুলোতে যাওয়া যেত না। এ জাহাজের মাধ্যমে সে বাধা দূর হবে।

তিনি আরও বলেন, জাহাজটিতে একটি ল্যাবরেটরি থাকবে, যাতে তাৎক্ষণিকভাবে পানির মান কিংবা ইলিশের খাদ্যের মতো বিষয়গুলো পরীক্ষা করা যাবে। এর ফলে গবেষণা সক্ষমতা বাড়বে।

ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কীভাবে ভূমিকা রাখবে

এ নিয়ে নদী কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক আবুল বাশার বলেন, ‘আগে আমরা যে নৌযান ব্যবহার করতাম, তা দিয়ে উত্তাল সমুদ্রে যাওয়া যেত না। এ জাহাজটি দিয়ে সেখানে যাওয়া যাবে।

‘আগে পানির নমুনা ঘটনাস্থল থেকে (ধরা যাক ভোলার মনপুরা) চাঁদপুরে আনতে আনতে গুণগত মান কিছুটা নষ্ট হয়ে যেত। এখন সে আশঙ্কা থাকছে না। যেহেতু জাহাজে ল্যাব আছে, সেহেতু তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়গুলো পরীক্ষা করা যাবে।’

গবেষণার সঙ্গে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ধরা যাক জলাশয়ের কোনো একটি স্থানে জাটকা বেশি, কোথাও কম। সে স্থানে কেন বেশি বা কম, সেটি নিরূপণে জাহাজটি ব্যাপক সাহায্য করবে। অর্থাৎ এটি আমাদের গবেষণা সক্ষমতা বাড়াবে।

‘গবেষণায় উঠে আসা ইলিশ উৎপাদন বাড়া-কমার কারণগুলো আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে পেশ করব। এর আলোকে উৎপাদন বৃদ্ধিতে নীতি পরিবর্তনের সুপারিশ করব। সরকার সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে মাছটির উৎপাদন বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘আগে ব্যবহৃত নৌযানের মাধ্য্যমে ইলিশের ডিম, জাটকা, উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্যগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংরক্ষণ করা যেত না। এখন সেটা করা যাবে।’

সম্পূরক ভূমিকা

নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, ‘জাহাজটির মাধ্যমে ইলিশের পাশাপাশি সমুদ্রের অন্যান্য মাছের উৎপাদন সংক্রান্ত তথ্যও পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে সরকারের ডেল্টা বা বদ্বীপ পরিকল্পনার আওতায় সুনীল অর্থনীতি বা ব্লু ইকোনোমির বিকাশ বেগবান হবে।’

দেশে ইলিশ উৎপাদনের অবস্থা

নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের দুই কর্মকর্তা আনিছুর ও আবুল বাশার জানান, দেশে ১০ বছর আগেও ইলিশের বার্ষিক গড় উৎপাদন ছিল প্রায় ২ লাখ টন। ক্রমাগত গবেষণার সুপারিশের ভিত্তিতে নীতি পরিবর্তনের ফলে গত কয়েক বছর বার্ষিক উৎপাদন বেড়েছে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টন করে। ২০১৯-২০ বছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন। এটা বাড়িয়ে ৬ লাখ ১০ হাজার টন করার পরিকল্পনা আছে সংশ্লিষ্টদের।

এ বিভাগের আরো খবর