রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের কর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন এক যাত্রী। ওই যাত্রী আনসার সদস্য। তার নাম রুবেল।
রুবেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার খেসবা গ্রামের মন্টুর ছেলে। তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনসার সদস্য হিসেবে কর্মরত।
রুবেল জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পৌঁছায়। স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় একজন নারী রেলকর্মী তাকে টিকিট দেখাতে বলেন।
এ সময় রুবেল জানান, তার কাছে টিকিট আছে। তবে দুই হাতে চারটি ব্যাগের কারণে দেখাতে সমস্যা হচ্ছে। টিকিটটি দেখানোর জন্য তিনি একটু সময় চান। এ সময় ওই নারী কর্মী সেখান থেকে চলে যান। পরে সেখানে আসেন অন্য একজন পুরুষ কর্মী। তিনি এসে টিকিট দেখানোর কথা বলেন।
রুবেল বলেন, ‘‘আইডি কার্ডে আমার বানান ‘আর ইউ বি ই এল’ কিন্তু রেলওয়ের অনলাইন রেজিস্টেশনের সময় ভুলবশত নামের বানানে ‘ আর ইউ বি এ এল ’ আছে। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়।
‘‘আমাকে ধাক্কা দেন ওই পুরুষ রেলকর্মী। এর পরে পাশেই এক ঘরে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন। এ সময় ওই নারী কর্মী বলেন, ‘আপনাকে বেশি মারা হয়নি তো’।’’
রুবেল বলেন, ‘আমি এই ঘটনার বিভাগীয় শাস্তি চাই। আমি তাদের বিরুদ্ধে রেলওয়েতে অভিযোগ করব।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারধরকারী ওই রেলকর্মীর নাম মেহেদি হাসান রাসেল আর নারী রেলকর্মীর নাম রেহেনাজ পারভীন পুতুল। তারা দুজন স্বামী-স্ত্রী। দুজনেই স্টেশনের টিকিট কালেক্টর (টিসি) হিসেবে কর্মরত।
রুবেলকে ধাক্কাধাক্কি ও চড় থাপ্পড় মারার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ২ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে একাধিকবার রুবেলকে মারপিট করতে দেখা গেছে।
কথোপকথনে শোনা যাচ্ছে রেলকর্মী চিৎকার করছেন।
রাসেল: এই আইডি কার্ড, এই আইডি কার?
রুবেল: আমার আইডি।
রাসেল: চিল্লাচ্ছিস ক্যান। এই চিল্লাচ্ছিস ক্যান?
এরপরই রুবেলকে তিনি থাপ্পড় মারেন।
রুবেল: আমাকে মারলেন কেন আপনি? আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ডাক দেন। আপনি আমাকে মারলেন কেন?
উপস্থিত অন্যদের রুবেল বলেন, উনি আমাকে মারলেন।
রুবেল: আমার আইডি কার্ড সবই ঠিক আছে। আপনারা গায়ে হাত তুললেন কেন বলেন?
রাসেল: তুই অত চিল্লালি কীসের জন্য। এই চিল্লালি কেন?
এই বলেই আবারও দুটি ঘুসি মারেন রাসেল। তিনি বারবার বলতে থাকেন, তুই চিল্লালি কীসের জন্য? এ সময় ওই ঘরের অন্য রেলকর্মীরা তাকে মারধর করা থেকে আটকানোর চেষ্টা করেন।
রুবেল: আমাদের স্টাফ আছে এখানে।
রেলকর্মী রাসেল চিৎকার করে ওঠেন।
রাসেল: তোর বাপ থাক। তোর চাকরি করি আমি? এই বলে গালি দেন। বলেন, চাঁপাইয়া কোথাকার। চাঁপাইয়ের কোন বাপ আছে ডাক। তুই তোর স্বভাবের জন্য মার খাইছিস।
এরপরও তিনি চিৎিকার করতে থাকেন। এ সময় নারী রেলকর্মী পুতুলেরও কথা শোনা যায়। কয়েকবার তিনিও তার স্বামীকে থামানোর চেষ্টা করেন।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আব্দুল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ওই সময় স্টেশনে ছিলাম না। পরে বিষয়টা শুনেছি। একটি ভিডিও ক্লিপও পেয়েছি। সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও বিষয়টা জানানো হচ্ছে। দেখা যাক কী সিদ্ধান্ত আসে।’
তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের মারপিট করার কোনো নিয়ম নাই, সুযোগ নাই। এটি করে থাকলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পশ্চিম রেলেওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রেলওয়ের কেউ কোনো যাত্রীকে মারতে পারে না। এটার সুযোগ নেই। ওই ঘটনার বিষয়ে এখনও অভিযোগ পাইনি। তবে, আমি এটি শোনার পর এবং ভিডিওটি দেখার পর একটি তদন্ত কমিটি করেছি।
‘পশ্চিম রেলওয়ের ডেপুটি সিসিএম গৌতম কুমার কুন্ডুকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ভিডিওতে বোঝা যাচ্ছে সেখানে ধস্তাধস্তির একটা ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত জানার জন্য কমিটি করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’