বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুঁজিবাজারে চাঙাভাব ফেরার ‘তিন ইঙ্গিত’

  •    
  • ৫ জানুয়ারি, ২০২২ ১৫:০২

চলতি বছরের চার দিনই সূচক বাড়ল। ২০২১ সালের শেষ কর্মদিবস ৩০ ডিসেম্বরেও বেড়েছিল সূচক। এই পাঁচ দিনে সূচকে যোগ হলো ১৯৮.৭৮ পয়েন্ট। এ নিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ দিনের মধ্যে সূচক বেড়েছে ৩০০ পয়েন্ট।

সূচক বাড়ল টানা পাঁচ দিন। গত ৭ ডিসেম্বরের পর প্রথম। সূচকের অবস্থান গত ৯ ডিসেম্বরের পর সবচেয়ে বেশি। লেনদেন সবচেয়ে বেশি ২১ নভেম্বরের পর। এর মাঝে গেছে ৩২ কর্মদিবস।

গত তিন মাসের হতাশা কাটিয়ে পুঁজিবাজার আবার উত্থানের দিকে যাত্রা শুরু করেছে কি না, এই আলোচনার মধ্যে এক দিনে এই তিনটি ঘটনা বিনিয়োগকারীদেরকে আশাবাদী করবে।

এ নিয়ে চলতি বছরের চার দিনই সূচক বাড়ল। ২০২১ সালের শেষ কর্মদিবস ৩০ ডিসেম্বরেও বেড়েছিল সূচক। এই পাঁচ দিনে সূচকে যোগ হলো ১৯৮.৭৮ পয়েন্ট।

এ নিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ দিনের মধ্যে সূচক বেড়েছে ৩০০ পয়েন্ট।

সূচকের এই অবস্থান গত ৯ ডিসেম্বরের পর সর্বোচ্চ। সেদিন সূচক ছিল ৬৯৮৪ পয়েন্ট।

দিন শেষে বেড়েছে ২১৮টি কোম্পানির পর, কমেছে ১২১টির। অপরিবর্তিত ছিল ৩৯টির দর।

লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪১৪ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এরচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল গত ২১ নভেম্বর। সেদিন হাতবদল হয়েছিল এক হাজার ৭৮৬ কোটি ২৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা।

বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের চিত্র

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে যে দর সংশোধন শুরু হয়েছিল, সেটি অবসান হওয়ার আগেই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যকার দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে আসে। আবার বছর শেষে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ তুলে নেয়ার জন্য তৈরি হওয়া বিক্রয় চাপ মিলে ক্রমেই সূচকের পতন হচ্ছিল।

তবে বছর শেষে ২৬ ডিসেম্বর থেকে ধীরে ধীরে সূচক বাড়তে থাকে। লেনদেনেও ফিরতে থাকে গতি। বছর শেষে শেয়ার কেনা আরও আরও মন দেয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। সেই সঙ্গে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা ব্যক্তি শ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় হতে শুরু করে।

টানা তিন দিন বাড়ার পর মঙ্গলবার লেনদেনে তিন ঘণ্টা সূচক উঠানামা করতে করতে শেষ বেলায় সূচক ১০ পয়েন্ট বাড়ার পরেই বোঝা গিয়েছিল, পতনের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে পুঁজিবাজার। হয়েছেও তা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ মনে করেন, এখন শেয়ারদর যে অবস্থানে আছে, তা বিনিয়োগের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে পুরো সময়টা ছিল মন্দার মধ্যে। এখনও যদি মন্দার মধ্যেই থাকত, তাহলে আস্থার জায়গাটি শূন্যের কোটায় নেমে আসত।’

বুধবার সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুই হয় ২০ পয়েন্ট সূচক বেড়ে। বেলা ১১টা ২৯ মিনিটে লেনদেন হতে থাকে সূচক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে। লেনদেন শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগেও সূচক বেশি ছিল ৪৮ পয়েন্ট। তবে শেষ ১০ মিনিটের বিক্রয় চাপে কিছুটা কমে। শেষ পর্যন্ত সূচকে যোগ হয় ৩৬.৩৯ পয়েন্ট।

এদিন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোম্পানির দর বেড়েছে আর্থিক খাতে। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বস্ত্র খাত। বিবিধ, প্রকৌশল খাতেও গেছে ভালো দিন। আগের দিন চাঙা থাকা বিমা খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি দর হারিয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি বাজার মূলধনের ব্যাংক খাতে বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির দর।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে কোনো একক খাতের আধিপত্য দেখা যায়নি। বেশ কয়েকটি খাতের কোম্পানির অবস্থান দেখা গেছে এই তালিকায়। গত তিন মাস দর অনেক খানি কমেছে, এমন কোম্পানির প্রাধান্য দেখা গেছে এই তালিকায়।

লেনদেনে টানা তৃতীয় দিন শীর্ষ অবস্থানে বিবিধ খাত। এর পরেই আছে বিমা, ওষুধ ও রসায়ন, বস্ত্র, প্রকৌশল এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। বেশ কিছুদিন পর ছয়টি খাতে এক সঙ্গে এক হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হতে দেখা গেল। সপ্তম অবস্থানে থাকা ব্যাংক খাতেও লেনদেন একশ কোটি টাকার আশেপাশেই দেখা গেছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ মনে করেন, এখন শেয়ারদর যে অবস্থানে আছে, তা বিনিয়োগের জন্য খুবই আকর্ষণীয়।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে পুরো সময়টা ছিল মন্দার মধ্যে। এখনও যদি মন্দার মধ্যেই থাকত, তাহলে আস্থার জায়গাটি শূন্যের কোটায় নেমে আসত।’

মন্দার সময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আরও সক্রিয়তা আশা করছেন অর্থনীতির এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগাকরীরা পুঁজিবাজারে যৌক্তিক আচরণ করবে এটাই সবাই প্রত্যাশা করে। কিন্ত অনেক সময় দেখা যায় তারা সেভাবে সক্রিয় থাকে না। তবে পুঁজিবাজারে এখন যে অবস্থা তাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এখনই বিনিয়োগ করা উচিত।’

সূচক বেড়েছে যেসব কোম্পানির দর বৃ্দ্ধিতে

সূচক বৃ্দ্ধিতে যে দশ কোম্পানির সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল তার মধ্যে প্রথমেই ছিল রবি। কোম্পানিটির শেয়ারদর দিনের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছার পর এর কোনো বিক্রেতা ছিল না।

৯.৯২ শতাংশ শেয়ারদর বাড়ার কারণে একটি কোম্পানিই সূচক বাড়িয়েছে ১৭.৬৫ পয়েন্ট।

আইসিবি শেয়ার দর ৩.৯২ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচকে যোগ হয়েছে ৩.৯২ পয়েন্ট।

সূচক যতটা বেড়েছে, তার অর্ধেকেই বাড়িয়েছে রবি

বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবিসি) শেয়ার দর দশমিক ৫৯ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১.৯৮ পয়েন্ট।

ব্র্যাক ব্যাংকের দর ২.১৪ শতাংশ বাড়ায় সূচক ১.৬১ পয়েন্ট, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের দর ৯.৯৪ শতাংশ বাড়ায় সূচক ১.২৬ পয়েন্ট বেড়েছে।

পাওয়ারগ্রিড ইউনাইটেড পাওয়ার জিপিএইচ ইস্পাত ও বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানিও সূচক বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৩১.২৬ পয়েন্ট।

অন্যদিকে সূচক সবচেয়ে বেশি ৩.৭ পয়েন্ট কমেছে গ্রামীণ ফোন ০.৮০ শতাংশ দর হারানোর কারণে। বেক্সিমকো লিমিটেড টানা তৃতীয় দিন দর হারিয়েছে। ১.৭ শতাংশ দর কমায় সূচক কমেছে ২.২৩ পয়েন্ট।

গ্রামীণ ফোন ও বেক্সিমকোর দর ক্রমেই কমছে, কমাচ্ছে সূচক

ওয়ালটন, বেক্সিমকো ফার্মা, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স রেনাটা, সোনালী পেপার, ওরিয়ন ফার্মা, ইউসিবি ও ট্রাস্ট ব্যাংক সূচক কমিয়েছে সবচেয়ে বেশি।

এই ১০টি কোম্পানির কারণে সূচক পড়েছে ১৩.৭৭ পয়েন্ট।

দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ কোম্পানি

দিনের সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়েছে এমন কোম্পানি ছিল আটটি, যার সবগুলোর শেয়ার দর নয় শতাংশের বেশি বেড়েছে।

দর বৃ্দ্ধিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, যার দর কমেছে ৯.৯৪ শতাংশ। কোম্পানিটির দর ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৫ টাকা ১০ পয়সা। গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের পর চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি চার টাকার বেশি আয়ের তথ্য জানানোর পর থেকে শেয়ারদর বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

এই ছয়টি খাতে একশ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা বেশ কিছুদিন পর ঘটল

টেলিকমিউনিকেশন খাতের রবির দর বেড়েছে ৯.৯২ শতাংশ। ৩৫ টাকা ৩০ পয়সা দরের শেয়ার পৌঁছেছে ৩৮ টাকা ৮০ পয়সায়।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা ন্যাশনাল হাইজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির দর বেড়েছে ৯.৯০ শতাংশ। ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকায় হাতবদল হয়েছে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪৭৫টি শেয়ার।

বিডি থাই অ্যালুমিনিয়মের দর ২০ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৯.৯০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২২ টাকা ২০ পয়সা।

এছাড়া লাভেলো আইসক্রিমের দর ৯.৮৮ শতাংশ, মতিন স্পিনিংয়ের দর ৯.৭০ শতাংশ, ফুওয়াং ফুডসের দর ৯.৫৫ শতাংশ, ওয়েস্টান মেরিন শিপয়ার্ডের দর বেড়েছে ৯.০৯ শতাংশ।

দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ তালিকায় নবম স্থানে থাকা মালেক স্পিনিংয়ের দর ৮.৫৬ শতাংশ আর মতিন স্পিনিংয়ের দর বেড়েছে ৮.১৩ শতাংশ।

আরও দুটি কোম্পানির দর ৭ শতাংশের বেশি, ৯টি কোম্পানির দর ৬ শতাংশের বেশি, ১৩টির দর ৫ শতাংশের বেশি, ১৭টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ২৮টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ৩৯টির দর ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

দর পতনের শীর্ষে যারা

বুধবার সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স; ৫.৭৫ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৫.১৪ শতাংশ কমে ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে হয়েছে ৮১ টাকা ১০ পয়সা।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৪.৯২ শতাংশ, সোনালী পেপারের দর ৪.৭৯ শতাংশ, জিলবাংলা সুগারের দর ৪.৬৮ শতাংশ কমেছে।

তিন শতাংশের বেশি শেয়ার দর কমেছে এমন কোম্পানির সংখ্যা ছিল চারটি। এর মধ্যে, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৩.৭৭ শতাংশ, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৩.৭০ শতাংশ, প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর ৩.২৮ শতাংশ এবং ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের শেয়ার দর কমেছে ৩.২৭ শতাংশ।

দর পতনের শীর্ষ দশে আরও ছিল ইজেনারেশন, যার শেয়ার দর কমেছে ২.৮৮ শতাংশ।

আরও ১২টি কোম্পানির শেয়ার দর এদিন দুই শতাংশের বেশি কমেছে।

বেশিরভাগ খাতেই লেনদেনের পাশাপাশি শেয়ারদর বেড়েছে

লেনদেনে সেরা দশ

দর পতন হলেও লেনদেনে শীর্ষে ছিল বিবিধ খাতের কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড, যার ১০০ কোটি ২২ লাখ টাকার ৬৬ লাখ ৩২ হাজার ৭০৩টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার দরে যোগ হয়েছে ৮ টাকা ৬০ পয়সা।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা ফরচুর সুজের শেয়ারে যোগ হয়েছে ৫ টাকা। লেনদেন হয়েছে ৬৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৬০ লাখ ৫৩ হাজার ৯১৬টি।

পাওয়ারগ্রিডে লেনদেন হয়েছে ৪৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, সাফকো স্পিনিংয়ে ৪১ কোটি ৮১ লাখ টাকা, জিএসপি ফাইন্যান্সে ২৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালে ২৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা লেনদেন হছে।

এছাড়া লাভেলো আইসক্রিমে ২৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, পেনিনসুলা হোটেলে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৯ লাখ টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর