বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাঁদপুরের সেই ইউনিয়নে নারী ভোটারদের দেখা নেই

  •    
  • ৫ জানুয়ারি, ২০২২ ১০:৫১

চর মান্দারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তারেক মোল্লা বলেন, ‘আমার কেন্দ্রের মোট ভোটার ২ হাজার ৮৩১ জন। নারী-পুরুষ প্রায় সমান ভোটার। পুরুষ ভোটাররা ভোট দিতে এলেও এখনও কোনো নারী ভোটার আসেননি।’

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে ভোট শুরুর আড়াই ঘণ্টা পরও কেন্দ্রে দেখা যায়নি কোনো নারী ভোটারকে।

স্বাধীনতার পর থেকেই এখানকার নারীরা ভোটকেন্দ্রে যান না। এবারও তার ব্যতিক্রম দেখা যায়নি।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।

কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ভোট দিতে এসেছেন পুরুষ ভোটাররা। ভোটের আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বরাবরের মতোই ‘পিরের আদেশ’ মেনে আসেননি কোনো নারী।

চর মান্দারী গ্রামের ভোটার আশরাফুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সকালেই ভোট দিতে চলে এসেছি। তবে আমাদের ইউনিয়নের নারীরা কখনোই ভোট দেয় না। পির সাহেব নির্দেশ দিয়েছিলেন নারীরা যেন পর্দার মধ্যে থাকে। স্বাধীনতার পর থেকে কোনো নারী ভোট দেয়ার আগ্রহ দেখায়নি, আমরাও জোর করিনি।’

চর মান্দারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তারেক মোল্লা বলেন, ‘আমার কেন্দ্রের মোট ভোটার ২ হাজার ৮৩১ জন। নারী-পুরুষ প্রায় সমান ভোটার। পুরুষ ভোটাররা ভোট দিতে এলেও এখনও কোনো নারী ভোটার আসেননি।’

স্থানীয়রা জানান, প্রায় পাঁচ দশক আগে রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে কলেরা মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসীর আয়োজন করা দোয়া মাহফিলে পির মওদুদ হাসান জৈনপুরী আদেশ দেন, ইউনিয়নের সব নারীকে কঠোর পর্দা করতে হবে। আর তাহলেই দূর হবে কলেরা।

এরপর ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। পর্দার কঠোর নিয়ম ধীরে ধীরে শিথিল হলেও ইউনিয়নের নারীরা ভোটকেন্দ্রমুখী হননি। ভোট না দিলেও বাড়ির বাইরের বাকি সব কাজই করছেন নারীরা। এমনকি নির্বাচনেও প্রার্থী হচ্ছেন।

ইউপি নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে দক্ষিণ ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের সদস্য পদপ্রার্থী মনোয়ারা বেগম।

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের আয়োজিত সভায় প্রায় ৩০০ নারী ভোটার এসেছিলেন। আমরা আশায় ছিলাম যে এবার তারা ভোট দিতে আসবেন। পরে আমাকে তারা জানিয়েছেন যে ভোট দেবেন না।’

নারীদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করতে শনিবার দুপুরে রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত কলেজ মিলনায়তনে সভাও করেছে উপজেলা প্রশাসন।

সভায় কোরআন ও হাদিসের আলোকে নারীদের ভোট দেয়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন ফরিদগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ইউনুস হোসেন।

নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে আয়োজিত সভায় শনিবার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, কোনো আলেম নারীদের ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেবেন না। পর্দা রক্ষা করে নারীদের ভোট দেয়া ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।

‘নারীরা ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকলে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। অযোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হলে ধর্মীয়ভাবে নারীরাও এর দায় এড়াতে পারেন না। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে তাদের ভোট দিতে হবে।’

বুধবার ভোটের এ চিত্র দেখে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের যে কুসংস্কার রয়েছে তা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দূর করতে হবে। যুগের পর যুগ প্রচলিত কুসংস্কার এক দিনে তো যাবার নয়।

‘যারা প্রার্থী রয়েছেন সবার উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে নারী ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর