বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এনভয়ের একক কর্তৃত্বে আসছেন সালাম মুর্শেদী

  •    
  • ৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০৯:১৯

এনভয়ের পূর্ণ কর্তৃত্বে আপনিই থাকছেন- এমন প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ জবাব দিয়ে সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘আমাদের যৌথ প্রয়াসও অবিচ্ছিন্ন থাকবে। গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এনভয় টেক্সটাইল উভয়ের অংশীদারির মধ্য দিয়েই চলবে। এই নিয়েই আমরা বাকি জীবন কাটিয়ে দেব।’

অনেক আগেই দেশে একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে ছোট হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় অনেক সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক যৌথ প্রয়াসও ভেস্তে যেতে দেখা গেছে। আবার নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও যৌথ কিছু উদ্যোগ দারুণভাবে সফল হয়েছে। তেমনই একটি যৌথ ব্যাবসায়িক বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ হলো এনভয় গ্রুপ।

অংশীদারত্ব বিবেচনায় এর মালিকানা যৌথ হলেও সফল এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা হয়ে আসছে অভিন্ন চিন্তাধারাতেই।

তবে সময় বদলেছে, ব্যক্তিকেন্দ্রিক সব ব্যবসার উদ্যোগেই এখন পরিবারতন্ত্র ঢুকেছে। এতে যৌথ উদ্যোগ যৌথ পরিবারে পরিণত হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় পরিবারের সদস্যরা গ্রুপের পরিচালক হচ্ছেন। দেশ-বিদেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আসছেন দ্বিতীয় প্রজন্মের এই সদস্যরা। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মেধা, উৎকর্ষতায় ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

পারিবারিক সমৃদ্ধিতে স্বাধীনচেতা মনোভাবও বাড়ছে। চাইছে নতুন কিছু করতেও। তা ছাড়া প্রথম প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের বয়স বাড়ছে। এতে উত্তরাধিকারদের মধ্যে প্রাপ্তি বণ্টন এবং চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এনভয় গ্রুপও এ স্রোতের ব্যতিক্রম থাকতে পারেনি। সময়ের বাস্তবতা ধরা দিয়েছে দুই কর্ণধার এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. কুতুবউদ্দিন আহমেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম মুর্শেদীর পরিবারে।

এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ।

এ প্রক্রিয়ায় ভাগ হয়ে যাচ্ছে সফল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এনভয় গ্রুপ। এ ভাগাভাগিটা হচ্ছে অংশীদারত্ব বিবেচনায় কার প্রাপ্তি কেমন সেই মানদণ্ডে। তবে এতে গ্রুপের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। নামও পরিবর্তন হচ্ছে না। এমনকি ব্যবসার ধরনও বদলাচ্ছে না। শুধু পরিবর্তন আসছে মালিকানার যৌথ কর্তৃত্বে।

এর সত্যতা স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সালাম মুর্শেদী।

এ বিষয়ে জানতে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় গ্রুপের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে।

প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি হারিয়ে যান সেই সোনালী দিনের স্মৃতিবিজরিত দিনগুলোতে। বলেন, ‘দেশে অন্যতম সেরা সফল উদ্যোক্তা হলেন মো. কুতুবউদ্দিন আহমেদ। উদ্যোক্তা হওয়ার আগে তার পরিচিতি ছিল প্রকৌশলী হিসেবে। আর আমি (আব্দুস সালাম মুর্শেদী) ছিলাম বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার।

‘ভিন্ন জগতের বাসিন্দা হলেও অসীম সম্ভাবনার পথে অভিন্ন চিন্তাধারা নিয়ে আমরা একসঙ্গে জীবনের ৩৭টি বছর একটি ব্যাবসায়িক উদ্যোগে থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাটিয়ে দিয়েছি। কুতুবউদ্দিন ভাই আমার প্রিয় বড় ভাই, অভিভাবকও। তৈরি পোশাক খাতের ছোট একটি ব্যাবসায়িক উদ্যোগ দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। এরপর যৌথ মেধা এবং মননশীলতার সবটুকু উজাড় করে আমরা আজ এ পর্যায়ে এসেছি।’

সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘এতে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। একসঙ্গে মোকাবিলা করেছি। আল হামদুলিল্লাহ একের পর এক সফলতাও পেয়েছি। একটি দিয়ে শুরু হলেও আমরা এখন ১৪টি খাতের ব্যাবসায়িক উদ্যোগে যুক্ত হয়েছি। যেখানে ৪০টির মতো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আমাদের রয়েছে। কর্মসংস্থান করেছি প্রায় ২১ হাজার কর্মীর। আমাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবার বার্ষিক টার্নওভার ছাড়িয়ে গেছে ৪০ কোটি ডলারেরও বেশি।’

‘এগুলো তো আমাদের সোনালী দিনের কথা বললাম। তার মানে কী আমরা আর সেই সোনালি দিনে নেই? না বিষয়টি তেমন নয়, বরং আগের চেয়ে সম্পর্ক মধুর হয়েছে। আমরা যত দিন বাঁচব, একসঙ্গে পথ চলব। কুতুবউদ্দিন ভাই তো বটেই, আমাদের উভয় পরিবারের মধ্যেই চমৎকার সম্পর্ক এবং ভালো বোঝাপড়া রয়েছে।’

তাহলে ‘এনভয়’ ভাগাভাগি হচ্ছে কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘আসলে বিষয়টি ভাগাভাগির ব্যাপারও নয়। কুতুবউদ্দিন ভাইয়ের বয়স হয়েছে, আমারও হয়েছে। আমরা পোশাক খাতে ছিলাম। কিন্তু আমাদের উত্তরাধিকার প্রজন্ম আরও ইনোভেটিভ বিজনেসে মনোযোগী। সময়ের বাস্তবতাকেও তো অস্বীকার করতে পারি না। প্রজন্মের চাহিদাকে মূল্য দিতে হবে।

‘আবার ভিন্ন ব্যাবসায়িক পরিকল্পনায় পা বাড়াতে গিয়ে চলমান প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাকেও তো হাত ছাড়া করা যায় না। এতে হয় আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে হবে, নয়তো আমাদের যৌথ উদ্যোগের কোনো একজনকে তার হাল ধরতে হবে। আমরা সে চেষ্টাই করেছি।’

এখন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির মালিকানার কর্তৃত্বে কে থাকছে, আপনি না গ্রুপ চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন আহমেদ? এমন প্রশ্নের জবাবে সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘দুই পরিবার মিলে আলোচনা হয়েছে। আসলে কুতুবউদ্দিন ভাই ও তার পরিবার মূলত পোশাক খাতে থাকতে চাচ্ছে না। অন্য ব্যবসাগুলোতেও আগ্রহ কম। তারা হয়তো আরও ভালো কিছু চিন্তা করছে।

‘এ পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা ও সন্তোষজনক আলোচনার ভিত্তিতে এনভয় গ্রুপের টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি অন্য সব প্রতিষ্ঠান সম্মানজনক র‌য়্যালিটিতে সন্তুষ্টিচিত্তে আমাকে দেয়া হয়েছে। আমি এগুলো কিনে নিয়েছি। এখন তার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াও শেষ হতে চলছে।’

এনভয় গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।

তাহলে এনভয়ের পূর্ণ কর্তৃত্বে আপনিই থাকছেন- এমন প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ জবাব দিয়ে সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘আমাদের যৌথ প্রয়াসও অবিচ্ছিন্ন থাকবে। গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এনভয় টেক্সটাইল উভয়ের অংশীদারত্বের মধ্য দিয়েই চলবে। এই নিয়েই আমরা বাকি জীবন কাটিয়ে দেব।’

তবে এ বিষয়ে কুতুবউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে জানা যায়, বর্তমানে তিনি এবং পরিবারের একাধিক সদস্য দেশের বাইরে রয়েছেন।

মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তার রোমিং নম্বরে ফোন করা হলে তিনি একাধিকবার ফোন রিসিভ করলেও নেটওয়ার্ক জলিতায় অপর প্রান্ত থেকে কোনো শব্দই স্পষ্ট শোনা যায়নি।

এনভয় গ্রুপের ব্যবসার প্রথম দিন থেকে একসঙ্গে আছেন দুই কর্ণধার কুতুবউদ্দিন আহমেদ ও সালাম মুর্শেদী। ১৯৮৪ সালে পোশাক খাতের মাধ্যমে তাদের যাত্রা শুরু হয়।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন আটজন। এতে গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন প্রকৌশলী কুতুবউদ্দিন আহমেদ। ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী।

বাকি ছয়জন পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যানের পরিবারের পক্ষে রয়েছেন রাশিদা আহমেদ, তানভীর আহমেদ ও সুমাইয়া আহমেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবারের পক্ষে রয়েছেন শারমিন সালাম, ব্যারিস্টার শেহরিন সালাম ঐশী এবং ইশমাম সালাম।

এনভয়ের পোশাক কারখানাগুলো কাপাসিয়া, আশুলিয়া, দৌলতিয়া বাজার, ঢাকার রামপুরায় স্থাপিত। গ্রুপের পোশাক কারখানা ইউনিটগুলো হলো এনভয় গার্মেন্টস, নাদিয়া গার্মেন্টস, এনভয় ডিজাইন, অ্যাস্ট্রাস গার্মেন্টস, রিগাল গার্মেন্টস, আরমার গার্মেন্টস, সুপ্রিম অ্যাপারেলস, ইপক গার্মেন্টস, প্যাসেল অ্যাপারেলস, ওলিও অ্যাপারেলস, ডর্নিক অ্যাপারেলস, ফন্টিনা গার্মেন্টস, মান্তা অ্যাপারেলস, এনভয় ফ্যাশনস ও টেক্সাস ড্রেসেস। ওয়াশিং বিভাগের ইউনিটটির নাম লন্ড্রি ইন্ডাস্ট্রিজ।

টেক্সটাইলের ডেনিম কারখানাটির নাম এনভয় টেক্সটাইলস। এই গ্রুপের মালিকানায় আছে ডায়িং, কার্টন ও পলি কারখানাও।

ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পিনাটা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, অ্যারো স্পিড ইন্টারন্যাশনাল, ওআইএ গ্লোবাল লজিস্টিকস। ট্রেডিং সংস্থাগুলো হলো এমারাল্ড ট্রেডিং, লুনার ইন্টারন্যাশনাল, বিজনেস সলিউশন সংস্থা ন্যাশনাল সিস্টেম সলিউশনস।

আবাসন ব্যবসায় এনভয় গ্রুপের প্রতিষ্ঠানটি হলো শেলটেক প্রাইভেট লিমিটেড। নির্মাণ খাতে রয়েছে শেলটেক ইঞ্জিনিয়ারিং। আবাসন খাত উন্নয়ন, পরামর্শ, নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক ব্যবসায় শেলটেক দেশের শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। ব্যাংক খাতে এনভয় গ্রুপের অংশীদারদের উপস্থিতি রয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডে।

প্লাটিনাম সুইটস ও প্লাটিনাম রেসিডেন্স নামে হসপিটালিটি খাতে ব্যবসা রয়েছে এনভয় গ্রুপের। ভোক্তাপণ্য খাতে বেঙ্গল মিট প্রসেসিং ও বাণিজ্যিক অফিস স্পেস ব্যবসায় সিয়াম টাওয়ার নামে প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের।

এ ছাড়া গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেড ও শেলটেক প্রোটেকশন সার্ভিসেস লিমিটেড। ট্রেজার সিকিউরিটিজ ও ট্রাইস্টার নামে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানেরও লাইসেন্স রয়েছে এনভয়ের সালাম মুর্শেদীর।

তা ছাড়া কাপাসিয়ায় ৫০ বিঘা জমির ওপর নেয়া হয়েছে নতুন প্রকল্প। সেখানে স্থাপিত হচ্ছে এনভয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক।

এ বিভাগের আরো খবর