পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ বাড়বে বলে হিসাব দিয়েছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
তিনি বলেন, ‘এ বছরই শেষ হবে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের তিনটি মেগা প্রজেক্টের কাজ। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মেট্রোরেল, একটি পদ্মা সেতু; আরেকটি হচ্ছে চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল। আগামী জুনে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হবে। এরপর অক্টোবরে চালু হবে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং ডিসেম্বরে চালু হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত মেট্রোরেল।’
‘এই তিনটি প্রকল্প চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে’ হিসাব দিয়ে শামসুল আলম বলেন, ‘শুধু পদ্মা সেতু চালু হলেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে ১ দশমিক ২ শতাংশ। মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী টানেল নিয়ে আলাদা কোনো প্রাক্কলন করা না হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনটি মেগা প্রজেক্ট একসঙ্গে চালু হলে দেশে জিডিপিতে প্রায় ২ শতাংশ বাড়তি প্রবৃদ্ধি যোগ হবে।’
পদ্মা সেতু
শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংবাদ সম্মেলনে একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মেট্রোরেল কেন শুধু ঢাকায় হবে। চিটাগাংয়েও মেট্রোরেল হওয়া উচিত। চিটাগাং এয়ারপোর্ট থেকে চিটাগাং রেলস্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল হওয়া উচিত। দেশের অন্যান্য জায়গায়ও যেন এটা প্রয়োগ করা হয়। যেখানে বড় শহর আছে এবং শহরের বাইরে বিমানবন্দর রয়েছে, সেখানে পর্যায়ক্রমে মেট্রোরেল চালু করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
২২ বছর আগে ১৯৯৮ সালের জুনে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু চালুর পর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক দুর্দান্ত গতি সঞ্চার হয়েছিল। শুরু হয়েছিল এক ভিন্ন বাংলাদেশের যাত্রা।
ওই সেতুর প্রধান ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক তখন বলেছিল, এটি চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগের চেয়ে দশমিক ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত গতি পাবে। তবে বাস্তবে দেখা যায়, প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে ১ থেকে দেড় শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি যোগ করে চলেছে বঙ্গবন্ধু সেতু। এ তথ্য বিশ্বব্যাংকসহ স্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বারবার দিয়েছেন।
পৌনে দুই বছর ধরে চলমান করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে আবার গতি ফেরার পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মেট্রোরেল
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার গবেষণা বিভাগ বলেছে, যদি করোনা পরিস্থিতি বর্তমানের পর্যায়েও থাকে, তার পরেও এবার প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। আর যদি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তাহলে প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশের মতো।
বিশ্বব্যাংক বলছে, এবার বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। আইএমএফ বলেছে, ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। আর এডিবি বলেছে, ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে।
এসব পূর্বাভাস সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি। এবার সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যদি একটু ঠান্ডা মাথায় হিসাব করি, তা হলে দেখতে পাবো, ২০২২ সালের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি যদি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসে, আমাদের অর্থনীতি যদি আগের অবস্থায় ফিরে আসে, তাহলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মতো ৮ শতাংশের ওপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ফিরে যাবে বাংলাদেশ। তার সঙ্গে এই তিন মেগা প্রকল্পের অর্থনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্য যোগ হলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অংকের (ডাবল ডিজিট) মাইলফলকের ঘরে নিয়ে যেতে পারব।
‘তখন আর আমাদের পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। উন্নয়নের উল্লম্ফন অব্যাহত থাকবে। ২০৩১ সালের মধ্যেই উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব আমরা।’
বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল
অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। রপ্তানি আয় বাড়ছে। আগামী দিনে আরও বাড়বে বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এখন একটাই ভয় করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন। এটা যদি সামাল দেয়া যায় আর এরমধ্যে এই তিন মেগা প্রকল্প চালু হয়ে গেলে অবশ্যই অর্থনীতিতে নতুন গতি পাবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি অবশ্যই বাড়বে।’
করোনার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৮ দশমিক ১৫ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল দেশে। যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।