রাজারবাগ দরবার শরিফের পির তার অনুসারীদের (মুরিদ) দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে ধর্মীয় লেবাসের আড়ালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে আসছেন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দাখিল করা প্রতিবেদনে এমন তথ্যের উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে একই সঙ্গে রাজারবাগের পিরসহ এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি উত্থাপন করা হয়। পরে আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১৩ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে দেয়।
এ সময় আদালতের পৃথক দুটি রিটের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন শিশির মনির ও এমাদুল হক বসির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
রাজারবাগের পির ও তার অনুসারীদের মাধ্যমে দেশব্যাপী দায়ের হওয়া গায়েবি মামলার তদন্ত চেয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট করে আট ভুক্তভোগী পরিবার।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাজারবাগের পির দিল্লুর রহমান, তার মুরিদ ও অনুসারীদের একের পর এক মামলা এবং সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে ২০২০ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি তদন্ত পরিচালনা করে। কমিশনের ২৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে রাজারবাগের পির ও তার অনুসারীদের দায়ী করা হয়।
ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ দরবার শরিফের সব সম্পদের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) তদন্ত করতে বলা হয়। এ ছাড়া তাদের কোনো জঙ্গি সম্পৃক্ততা আছে কি না তা তদন্ত করতে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে বলা হয়। একই সঙ্গে আবেদনকারীদের মামলা প্রতারণামূলক কি না সে বিষয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
উচ্চ আদালতের এ নির্দেশের পর সিআইডি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে। এ বিষয়ে এর আগেও আরেকটি তদন্ত করে সিআইডি।
দ্বিতীয় দফায় দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে সিআইডি বলেছে, রিট আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাজারবাগ সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরিফের পির মো. দিল্লুর রহমান ও তার অনুসারীদের মামলার অধিকাংশই মানবপাচার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের বিভিন্ন ধারায় দায়ের করা এবং মামলাগুলো একই প্রকৃতির, যা সাজানো মনে হয়।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাজারবাগের পির দিল্লুর রহমান, তার মুরিদ ও অনুসারীদের একের পর এক মামলা এবং সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে ২০২০ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি তদন্ত পরিচালনা করে। কমিশনের ২৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে রাজারবাগের পির ও তার অনুসারীদের দায়ী করা হয়।
সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে রাজারবাগ দরবার শরিফের পির নিজ ভাই ও ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে তার অনুসারী ও নিজস্ব লোক দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় মোট ৪৭টি হয়রানিমূক ও মিথ্যা মামলা দায়ের করেন, যা এই অনুসন্ধানকালে প্রকাশ হয়।
অনুসন্ধানে আরও তথ্য পাওয়া যায়- জনৈক লাকী, পিতা মো. শামছুর রহমান রাজারবাগ পিরের মুরিদ থাকাকালে রেজা আহম্মেদ ওরফে শেখর আহম্মেদ, মো. মাহবুবুল আলম ওরফে আরিফ, মোহাম্মদ রহমান মোয়াজ, মিসেস আছিফাতুল্লাহদের প্ররোচনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ ঢাকায় এম এম সাইফুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রকৃত ঘটনা জেনে এ বিষয়ে ঢাকা নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে হলফনামা দেন।
সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘সার্বিক তথ্য পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হয় যে রিট আবেদনকারীরাসহ অন্যান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাজারবাগের পির দিল্লুর রহমান ওরফে অরুন জায়গা-জমির বিরোধসহ হীনস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অনুসারীসহ নিজস্ব লোক দিয়ে ধর্মীয় লেবাসে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে হয়রানিমূলক ও মিথ্যা মামলা করেন।
পিরের অন্যতম সহযোগী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনিছুর রহমান, কুমিল্লার মফিজুল ইসলাম, নোয়াখালীর মুহাম্মদ সাখেরুল কবির, মুন্সিগঞ্জের মাহবুব আলমের যোগসাজশে বিভিন্ন জেলায় মামলাগুলো করা হয়।
সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে রাজারবাগ দরবার শরিফের পির নিজ ভাই ও ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে তার অনুসারী ও নিজস্ব লোক দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় মোট ৪৭টি হয়রানিমূক ও মিথ্যা মামলা দায়ের করেন, যা এই অনুসন্ধানকালে প্রকাশ হয়।
সবশেষে সিআইডি বলেছে, ক্ষমতার অসাধু প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের হীন প্রয়াসে করা কর্মকাণ্ডের জন্য অনুসন্ধানে উদঘাটিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে প্রতিবেদনটি দাখিল করা হলো।
রাজারবাগ দরবারের পির ও দরবারের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়েরের অভিযোগ এনে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন একাধিক ভুক্তভোগী। এরই ধারাবাহিকতায় আদালতের নির্দেশে সিআইডি তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করে।