আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিনয়ী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিতে যে চেষ্টা করছেন, তা যেন ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মীর আচরণের কারণে বাধাপ্রাপ্ত না হয়।
মঙ্গলবার বর্ণাঢ্য আয়োজনে দেশের প্রাচীনতম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করা এই সংগঠনটির ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৬ বছরের সেনা শাসনের সময় গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা তুলে ধরেন বক্তারা।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২-এর বাড়ির সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়।
সাড়ে ৭টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সকল সাংগঠনিক কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেন ছাত্রলীগ নেতারা।
বেলা দুইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। এই জমায়েতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন কলেজ ও নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আসেন।
বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সেখানে চলে সমাবেশ। এরপর বের হয় মিছিল। তার আগে বেলুন ও পায়রা উড়ানো হয়।
নেতা-কর্মীরা শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন হয়ে কাকরাইল দিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান। অফিস সময় শেষে এই কর্মসূচির কারণে সেখানে তৈরি হয় তীব্র যানজট।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি আশা করেন, অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্রকে ছিন্ন করে ছাত্রলীগ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করবে।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘ছাত্রলীগ একটি সৃষ্টিশীল সংগঠন। করোনাভাইরাসে যখন সারা দেশ আক্রান্ত তখন ছাত্রলীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সন্তান যখন তার পিতার কাছে যায় না, ছাত্রলীগই তখন তাদের দাফন কাফন থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ করেছে। এই ছাত্রলীগ কৃষকের ক্ষেতের ধান কেটে তাদের গোলায় পৌঁছে দিয়েছে।’
ছাত্রলীগ মানবিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে বলেও মনে করেন নানক।
ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় বিনয়ী হওয়ার কথা বলেন। ... জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে যেভাবে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য তিনি যেভাবে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, সেই পথকে যেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মী বাধাগ্রস্ত না করতে পারে সেদিকে সবাই খেয়াল রাখবেন।’
ছাত্রলীগের কারণে শিক্ষাঙ্গনে শান্তি বজায় আছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা থাকার কারণে দেশে যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে তারা ভয় পায়। তাদের কোথাও কোনো অবস্থান নেই।’
তবে এই কর্মসূচিকে ঘিরেই শান্তি বিঘ্ন হয়েছে। নেতা-কর্মীরা জমায়েত হওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদদীন হল ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়ান।
ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আগে থেকেই অপরাজেয় বাংলা পাদদেশে অবস্থান করছিল। জসীমউদদীন হলের নেতা-কর্মীরা সেখানে অবস্থান নিতে চাইলে দুই পক্ষে কথা-কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষ পাথর ছোড়াছুড়ি করতে থাকে। সংঘর্ষ চলতে থাকলে মঞ্চ থেকে নেমে আসেন ছাত্র্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তিনি জসীমউদদীন হলের নেতা-কর্মীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ করলে তারা শান্ত হয়। কিন্তু এরপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তখন লেখক ভট্টাচার্যও আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে তাকে হেলমেট পরিয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা নিয়ে আবার মঞ্চে আসেন। এরপর শুরু হয় সমাবেশ।
এতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মাঈন উদ্দীন হাসান চৌধুরী, লিয়াকত শিকদার, বদিউজ্জামান সোহাগ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, ইসহাক আলী খান পান্না, নজরুল ইসলাম বাবু, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ বিভিন্ন ইউনিটের সহস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন।