অশালীন আচরণের অভিযোগ তুলে নওগাঁর বদলগাছীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অপসারণের দাবি করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এই দাবিতে ৩০ বীর মুক্তিযোদ্ধার সই করা অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। তবে ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন বলছেন, অভিযোগগুলো সত্য নয়; অভিযোগকারীরা ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
ইউএনও আলপনা সেখানে যোগ দিয়েছেন গত বছরের ৪ জানুয়ারি।
অভিযোগের বিষয়ে সদর ইউনিয়নের সাবেক কমান্ডার ও গাবনা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জসমত আলী জানান, ইউএনও হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকে সবার সঙ্গেই বিরূপ আচরণ করতেন আলপনা। কোনো কাজে তার কাছে গেলে গুরুত্ব দেন না। বসার জন্য জায়গাও দেন না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গেও তিনি এমন আচরণ করেন।
জসমত বলেন, ‘সরকার ও দেশের জনগণ আমাদের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন, আমাদের শ্রদ্ধা করেন। সরকারি কর্মকর্তাদের আমাদের প্রতি গুরুত্ব ও সম্মান দিতে বলা হয়েছে। আমাদের বয়স হয়েছে, আর কয়দিনইবা বাঁচব। ইউএনও আমাদের সন্তানের বয়সী। আমাদের সঙ্গে তার এমন আচরণ করা তার ঠিক হয়নি। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তার এমন আচরণে মর্মাহত।
‘আগে যারা ইউএনওর দায়িত্ব পালন করে গেছেন, তারা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন, সম্মান দিয়েছেন, কিন্তু তিনি একমাত্র ইউএনও যিনি আমাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করছেন। যার কারণে বাধ্য হয়ে অভিযোগপত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠিয়েছি। আমরা দ্রুত তার অপসারণ চাই। নইলে আমরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’
বদলগাছীর সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডিএম এনামুল হক বলেন, ‘তিনি (ইউএনও) মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করেন না। আমাদের সম্মান করেন না। নাম ধরে ডাকেন। এমনকি কোনো পরামর্শের জন্য গেলে সহযোগিতা না করে অসম্মানজনক কথা বলেন। শিক্ষক ও সম্মানিত ব্যক্তিদের সম্মান করেন না।
‘এসব বিষয়ে ইউএনওর সঙ্গে আগেও কথা বলেছি, কিন্তু তিনি নিজেকে সংশোধন করেননি। তার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে ডাকযোগে অভিযোগ পাঠিয়েছি। আমরা তার দ্রুত অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের সঙ্গেই যদি এমন আচরণ করেন তাহলে সাধারণ সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেন একবার ভাবুন।’
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম দেওয়ান বলেন, ‘উপজেলায় ভাতাভোগী প্রায় ৪৫০ মুক্তিযোদ্ধা আছেন। অনেক অসহায় ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাও আছেন। আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সরকারি ত্রাণের কম্বলের জন্য বেশ কয়েক দিন আগে ইউএনওর কাছে গিয়ে আবদার করেছিলাম যেদিন কম্বল বিতরণ করা হচ্ছিল। সেখানে তিনি উপস্থিত থেকে বিতরণ করছিলেন।
‘এ সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে তদন্ত করে কম্বল দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। সে সময় তার কথায় আমরা মনঃক্ষুণ্ন হয়ে সেখান থেকে লজ্জায় ফিরে আসি।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও আলপনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন কি না তা আমার জানা নেই।’
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা বিষয়গুলো সত্য কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেসব অভিযোগের কথা বললেন তার মধ্যে কম্বল বিতরণ একটি বিষয় আছে। যেদিন কম্বল বিতরণ করা হচ্ছিল সে সময় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এসে কিছু কম্বল চায়। তখন আমি জানতাম না তারা আসলে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা কি না, তাই বলেছিলাম একটু তদন্ত বা খোঁজ নিয়ে কম্বল দেয়ার ব্যবস্থা করব।
‘আমার অফিসে আসলে বসতে বলি না এমন অভিযোগ ঠিক নয়। আসলে অনেকেই তো আমার অফিসে আসে। যার কারণে জায়গা বা বসার সিটের স্বল্পতা হয়ে যায় অনেক সময়। আর নামের পরে সাহেব বলেই ডেকে থাকি সাধারণত। যেমন অমুক সাহেব কেমন আছেন বা বসেন এমনটাই আরকি। এতে যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধা কষ্ট পেয়ে থাকে তাহলে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কী-ইবা বলতে পারি।
‘কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছি বলে আমার মনে পড়ছে না। আমার দায়িত্বের পরিধি থেকে যেটুকু কাজ করার সেটাই করছি। আমার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা যেসব অভিযোগ করছেন, সে বিষয়ে আমার ওপর মহল থেকে অবগত করা হয়নি বা কেউ কিছু বলেনি এখন পর্যন্ত। যদি অভিযোগ করে থাকে তাহলে তদন্ত হলেই সঠিকটা জানা যাবে অভিযোগের সত্যতা কতটুকু।’