বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলিন্ডার গ্যাসের দাম কমেছে নামেই

  •    
  • ৪ জানুয়ারি, ২০২২ ১৯:২৫

পরপর দুই মাস গ্যাসের দাম কমানোর ঘোষণা এলেও বাজারে এর প্রভাব নেই। খোদ রাজধানীতে নির্ধারিত দামের চেয়ে ৭২ থেকে ১০২ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। নিয়ন্ত্রক সংস্থা হুঁশিয়ারি দিলেও এর বাস্তবায়ন নেই।

পরপর দুই মাস কমার পর সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী রান্নার গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজির সিলিন্ডারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হওয়ার কথা এক হাজার ১৭৮ টাকা।

তবে রাজধানীর শেওড়াপাড়া, ধানমন্ডি ও লালমাটিয়ায় মোট আটটি দোকানে গিয়ে কোথাও এই দরে গ্যাসের সিলিন্ডার পাওয়া যায়নি।

সবচেয়ে কম চেয়েছেন যে দোকানি, তিনি দাম বলেছেন এক হাজার ২৩০ টাকা। একজন চেয়েছেন এক হাজার ২৮০ টাকা।

অর্থাৎ সোমবার সিলিন্ডারপ্রতি ৫০ টাকা কমানোর আগে যে দাম ছিল, দোকানিরা চাইছেন সেই দামেরও বেশি। সেদিন কমানোর আগে নির্ধারিত দাম ছিল এক হাজার ২২৮ টাকা।

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার এলপিজির দাম গত ৫ মাস ধরে প্রতি মাসেই সমন্বয় করছে।

গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পরপর তিন মাস দাম বেড়েছে। গত অক্টোবরে ১২ কেজির সিলিন্ডারে ২২৬ টাকা ও নভেম্বরে বাড়ানো হয় আরও ৫৪ টাকা।

সে সময় আদেশ আসার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় গ্যাসের দাম। সেই দাম অবশ্য সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশিই ছিল।

গত ১২ এপ্রিল সরকার ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৮৪২ টাকা ঠিক করে দিলেও রাজধানীর বিভিন্ন দোকানভেদে ১০৫০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

টানা কয়েক মাস বাড়ানোর পর ২ ডিসেম্বর সিলিন্ডারের দাম ১০২ টাকা কমায় সরকার। তখনও দাম কমার সুফল পড়েনি।

সোমবার আবার দাম কমিয়ে সরকার জানায়, নতুন দাম কার্যকর সন্ধ্যা ৬টা থেকে। আর নতুন এই দাম দোকানে টানিয়ে রাখতে হবে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দাম কমানোর নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি প্রতিটি আউটলেটে নতুন মূল্যতালিকা টানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত দামের বেশি কোনো ব্যবসায়ী বিক্রি করছে এমন অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তবে সরকারি কর্মকর্তাদের এই ধরনের বক্তব্য যে প্রায়শই বাস্তবতার ধারেকাছেও থাকে না, সেটি আবার দেখা গেল।

মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় চুলা হাউজে বিক্রি হয় গ্যাসের সিলিন্ডার। দোকানটির স্বত্বাধিকারী স্বপন মিয়া দাম চাইলেন এক হাজার ২৩০ টাকা।

সরকার তো দাম কমিয়েছে, আগের দামের চেয়ে বেশি কেন চাইছেন- এমন প্রশ্ন করার পর স্বপন বললেন, ‘১২শ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না।’

তার দাবি, তিনি সিলিন্ডার কিনেছেন ১ হাজার ১৪০ টাকায়। এই দামে কিনে ১ হাজার ১৭৮ টাকায় বিক্রি করলে ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন।

একই এলাকায় সোনালী গ্যাস ভান্ডার নামে আরেকটি দোকানের মালিক খুরশিদ আলম বলেন, ‘যে লাভ ধরে মূল্য নির্ধারণ হয়, তা বাস্তবে প্রয়োগ করলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যাবে না। দোকান বন্ধ করে চলে যেতে হবে।’

ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে একটি দোকানের বিক্রেতা মো. খলিল বলেন, তারা দাম কমানোর ঘোষণা শুনেছেন। তবে পাইকারিতে এখনও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। তাই খুচরাতেও তিনি আগের দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

দাম বেশির পাশাপাশি ওজনে কম দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

মিরপুরের বাসিন্দা আকলিমা খাতুন বলেন, ‘মাসে আমার দেড়টা সিলিন্ডার লাগে। দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলে সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি দামে কিনতে হয়। কিন্তু কমানোর ঘোষণা এলে সেটি কার্যকর হয় না।’

আকলিমা জানান, তিনি কখনও সরকার নির্ধারিত মূল্যে সিলিন্ডার কিনতে পারেননি।

শেওড়াপাড়া বাজারে কথা হয় তরিকুল ইসলামের সঙ্গে। তার বাসায় পাইপে গ্যাসের সংযোগ নেই। তাই সিলিন্ডারে রান্না সারতে হয়।

তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত দাম কখনোই কার্যকর হয় না। মাসে মাসে দাম নির্ধারণ হয়, কিন্তু ব্যবসায়ীদের অজুহাতে সেই দামে কেনা যায় না।’

ভোক্তাদের এই অভিজ্ঞতার বিষয়টি জানানো হলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘কোনো বিক্রেতা বেশি দাম নিচ্ছে এমন অভিযোগ যদি কেউ করে, সঙ্গে সঙ্গে সেই দোকানে পুলিশ পাঠানো হবে। ব্যবসা যদি করতে চায় তাহলে নির্দেশনা মেনেই করতে হবে।’

ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভোক্তা স্বার্থ সমুন্নত রাখতে মাঠ পর্যায়ে কঠোর তদারকিব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

‘করোনার কারণে এমনিতেই মানুষ আর্থিক কষ্টে আছে, এই অবস্থায় ভোক্তার কাছ থেকে বেশি অর্থ হাতিয়ে নিলে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর