সেনা সদস্যদের গুণগতমান বিশ্ব পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এর মাধ্যমে আমাদের ওপর জনগণের যে আস্থা আছে, তার সঠিক প্রদর্শন আমরা করতে চাই।’
নড়াইলের লোহাগড়ার মল্লিকপুর ইউনিয়নের নিজ গ্রাম করফায় শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ এবং তার বাবার নামে ১০ শয্যা বিশিষ্ট ‘অধ্যাপক শেখ মো. রোকন উদ্দীন আহমেদ’ মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এগিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আর্মি লেভেল লজিস্টিক এফটিএক্স (ফিল্ড ট্রেনিং এক্সারসাইজ) পরিচালিত হচ্ছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের গুণগতমান বিশ্ব পর্যায়ে নিয়ে যাব।’
তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী বিশ্ব শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সদস্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা সেটা অর্জন করছি। আমরা এই অবস্থান ধরে রাখতে চাই।’
মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত ‘পদ্মা সেতু রেল লিঙ্ক প্রজেক্ট’ সম্পর্কে সেনাপ্রধান বলেন, ‘রেল প্রজেক্টটি সেনাবাহিনী দেখাশোনা করছে। গুণগতমান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ হবে।’
ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘করফা গ্রাম আমার পৈত্রিকভিটা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এখানে আমি ছিলাম। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমার বাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
এ সময় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস ক্যাম্পের বর্তমান অবস্থার খোঁজখবর নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এগিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আর্মি লেভেল লজিস্টিক এফটিএক্স (ফিল্ড ট্রেনিং এক্সারসাইজ) পরিচালিত হচ্ছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি যশোর এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ার, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক এবং কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট মেজর জেনারেল এফএম জাহিদ হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়সহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
২০২১ সালের ২৪ জুন তিন বছরের জন্য সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমবারের মতো নড়াইলে নিজ গ্রামে যান তিনি।
করফা গ্রামে তার আগমনে আনন্দিত নড়াইলবাসী। সেনাপ্রধানকে এক নজর দেখতে ভিড় করেন গ্রামবাসীসহ বিভিন্ন পেশার হাজারও মানুষ। তিনি হেলিকপ্টারে করে নিজ গ্রামে পৌঁছান মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় নয়টি জেলা রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে। এই রেলপথ ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, যশোর এবং খুলনা জেলাকে রেলপথ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করবে।
প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যে শেষ হবে। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে আনুমানিক ১ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটবে। সরকারের জি টু জি প্রকল্পের আওতায় চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে রেল মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পে ‘চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি’ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কর্মরত।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্প পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছে। ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৫৯টি রেল সেতু, ১২৪টি কালভার্ট ও ১৩২টি আন্ডারপাসসহ ২০টি স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।