রাজধানী থেকে জাল টাকা বিক্রির একটি চক্রের হোতাসহ কয়েকজনকে আটক করেছে র্যাব। বাহিনীটি জানিয়েছে, চক্রটি জাল ১ লাখ টাকার নোট বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকায়। এসব জাল টাকা হোতার কাছ থেকে তা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দিতেন চক্রের সদস্যরা।
জাল টাকার চক্রে জড়িতদের ধরতে গত কয়েক ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসছে র্যাব। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে রাজধানীর পল্লবী থেকে চক্রের হোতাকে ধরতে সক্ষম হয় তারা।
কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে মঙ্গলবার এসব অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ২৮ নভেম্বর র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল মিরপুর মডেল থানাধীন এলাকায় অভিযানে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকার জাল নোটসহ জাল টাকা তৈরি ও বিক্রয়কারী চক্রের সক্রিয় চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী সোমবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর একটি দল ঢাকার পল্লবী থেকে জাল নোট তৈরি চক্রের হোতা মো. ছগির হোসেনকে আটক করা হয়।
তার সঙ্গে সেলিনা আক্তার পাখি ও মো. রুহুল আমিন নামে আরও দুজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে জাল ১ কোটি ২০ লাখ টাকার নোট এবং এসব নোট তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
র্যাবের ব্রিফিংয়ে বলা হয়, আটককৃতরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় জাল টাকার নোট তৈরি করে বিভিন্ন লোকদের কাছে বিক্রি করে আসছিল। এ চক্রটিতে নিয়ন্ত্রণ করেন ছগির। তার সঙ্গে রয়েছেন ১৫-২০ জন সদস্য।
জাল টাকা তৈরি ও বিক্রির অভিযোগে র্যাবের হাতে আটক তিন জন
খন্দকার আল মঈন বলেন, ছগির ১৯৮৭ সালে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে একটি হোটেল বয়ের কাজ নেয়। পরবর্তীকে ভ্যানে ফেরি করে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রয় করত। গার্মেন্টস পণ্য বিক্রয়ের সময় ছগিরের সঙ্গে ইদ্রিস নামে একজনের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইদ্রিদের মাধ্যমে জাল নোট তৈরির হাতেখড়ি ছগিরের। প্রথমে তিনি জাল নোট বিক্রি করতেন, পরবর্তীতে জাল নোট তৈরির বিষয়টিও রপ্ত করেন।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ২০১৭ সালে জাল নোটসহ ইদ্রিস ও ছগির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। এক বছর জেল খেটে বের হয়ে ২০১৮ সাল থেকে ফের জাল নোট তৈরি শুরু করেন ছড়ির। নোটগুলো তার চক্রে থাকা অন্যান্য সহাযোগীর মাধ্যমে বিক্রি করতেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘প্রতি ১ লাখ জাল নোট ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সহযোগীদের কাছে বিক্রি করতেন ছগির। তার সহযোগিরা মাঠ পর্যায়ে জাল নোট সরবরাহ ও বিক্রি করতেন। সাধারণত কোনো মেলায়, ঈদে পশুর হাটে ও অধিক জনসমাগমের অনুষ্ঠানে জাল নোট বিভিন্ন কৌশলে ব্যবহার করতেন তারা। বর্তমানে বাণিজ্য মেলা ও শীতকালীন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন উৎসব, মেলাকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন তারা।’
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার সেলিনা আক্তারের স্বামীও জাল নোট তৈরি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং বর্তমানে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেলে আছেন। সেলিনা ঢাকা জেলার কামরাঙ্গীর চরে একটি বিউটি পার্লারে বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। স্বামীর মাধ্যমে এ চক্রের হোতা ছগিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়।
আটক রুহুল আমিন চক্রের হোতা ছগিরের অন্যতম সহযোগী। তার মাধ্যমে অন্যান্য সহযোগীদের পরিচয় হয় ছগীরের। জাল নোট তৈরি ও বিক্রয়ের মামলায় এর আগে ২০১৭ সালে জেলে যেতে হয়েছিল রুহুলকে। মামলাটি এখনও চলমান।
র্যাব জানায়, আটককৃতদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।