বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সম্মেলনের জন্য অধীর ছাত্রলীগ

  •    
  • ৪ জানুয়ারি, ২০২২ ১২:১৭

ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে গেছে জুলাই মাসে। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অধীর হয়ে আছেন নতুন কমিটির জন্য। সংগঠনের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা রকম অভিযোগ জমে উঠেছে।

করোনা মহামারির কারণে গত বছর তেমন কোনো কর্মসূচি ছিল না ছাত্রলীগের। তবে বছরজুড়ে নানা রকম বিতর্ক আর সমালোচনার জন্ম দিয়েছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনটি।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সংগঠনের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর বিরক্ত। বিভিন্ন জেলায় সম্মেলন না করে কেন্দ্র থেকে সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করে কেটেছে সংগঠনটির পুরো বছর। এমন পরিস্থিতিতে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে জোর দাবি উঠেছে, তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় সম্মেলন চান।

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি দেয়া হয় ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই। এর প্রায় এক বছর পর ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। দুর্নীতি, অনিয়ম ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনকেই অব্যাহতি দেয়া হয়।

এরপর সংগঠনের দায়িত্ব নেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। তারা এখনও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ২০২০ সালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এ দুজনকেই ভারপ্রাপ্ত থেকে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে এ দুজনের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি দিচ্ছেন। ফাইল ছবি

প্রেস রিলিজ কমিটি

ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কমিটি দেয়ার কথা বললেও সে বিষয়টি মানেননি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। ‘প্রেস রিলিজ’-এর মাধ্যমে তারা কমিটি দিয়েছেন। সে বিষয়টি করতে আওয়ামী লীগ থেকে তাদের বারবার নিষেধ করা হয়েছে।

এভাবে কমিটি গঠন করে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে। এ কারণে কয়েকটি জায়গায় এভাবে কমিটি করার পর বিক্ষুব্ধ হয়েছে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতৃত্ব। সিলেট জেলা কমিটি ও মহানগর কমিটি, ময়মনসিংহ জেলা কমিটি ও ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটি হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ হয়েছে ওই সব জায়গার সংগঠনের একটি অংশ।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যথাসময়ে সম্মেলন না হওয়ায় যোগ্য নেতারা বয়সের কারণে বাদ পড়ে যাচ্ছেন সংগঠন থেকে। তাই সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব পরিবর্তনের মাধ্যমে যোগ্য নেতাকে সংগঠনের দায়িত্বে আনা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুরো সংগঠনকে নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করছেন। তারা যেখানে কমিটি দিয়েছেন, সেখানে মাদকাসক্ত, নারী নির্যাতন মামলার আসামি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াত-শিবির-রাজাকার সন্তানদের স্থান দেয়া হয়েছে। শীর্ষ দুই নেতা নিজেদের ইচ্ছামতোই কমিটিগুলো দিচ্ছেন। আগে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতেন।

‘কী এমন আলাদিনের চেরাগ তারা পেয়ে গেছেন যে এখন দামি গাড়ি, দামি ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেছেন? এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্যই কি তারা সংগঠনের সম্মেলন না চেয়ে বরাবরের মতো ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে থাকতে চান?’

আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যের কমিটি নিয়ে আপত্তি রয়েছে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের। ছবি: সংগৃহীত

সম্মেলন কবে, এটাই আলোচনা

ছাত্রলীগের এখন আলোচনার মূল বিষয় সম্মেলন। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সম্মেলনের দাবি তুলছেন। তারা চান, চলতি বছরেই যেন সম্মেলন হয়ে যায়।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বলা হয়েছে, দুই বছর পর পর হবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন। সে হিসাবে বর্তমান কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে গেছে ২০২১ সালে ৩১ জুলাই। সবাই তাকিয়ে আছে সংগঠনের সাংগঠনিক অভিভাবক শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের দিকে।

কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার অভিযোগ, তাদের সঙ্গে সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতার দূরত্ব দিন দিন বাড়ছে।

তাদের দাবি, ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাও সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলন করার বিষয়ে মতামত জানাবেন তারা।

ছাত্রলীগের সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সুনির্দিষ্ট একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক সেই গঠনতন্ত্র মেনে চলছেন না। তারা ছাত্রলীগকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন, যেটা সংগঠনের জন্য অশুভসংকেত।

‘সম্মেলন দেয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বারবার অবহিত করার পরেও তারা আমাদের কথায় পাত্তা দিচ্ছেন না, মধুর ক্যান্টিনে আমাদের মুখোমুখি হলে তারা আমাদের এড়িয়ে চলেন। আমরা তাদের দুজনকে বলেছি, আপনারা সম্মেলনের বিষয়ে মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন, তারপর তিনি যে সময় নির্ধারণ করে দিবেন, সে সময় সম্মেলন হোক।’

কেন্দ্রীয় ও জেলায় বিতর্কিতরা

কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য জেলায় যে কমিটিগুলো করেছেন, সেখানে স্থান পেয়েছেন বিতর্কিতরা। তাদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়া ৬৮ জনের অনেকের বিরুদ্ধে বয়স উত্তীর্ণ হওয়া ও বিবাহিত হওয়া ছাড়াও চাঁদাবাজি, মাদক সেবন, মারামারি ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, যশোর, নড়াইল, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, মানিকগঞ্জ, সিলেট জেলা, মহানগরসহ বেশ কয়েকটি জেলা ইউনিটে যে কমিটি করে দেয়া হয়েছে, তাতে বিতর্কিতরা স্থান পেয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। সাত মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি নাজমুল ইসলামকে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ তার ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করেছেন, এখানে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। আর ময়মনসিংহ জেলা কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সংগঠনটির অনেক নেতা।

এসব বিষয় নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘বিগত বছরে করোনা মহামারির প্রকোপে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক জায়গায় সংগঠনের কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছিল। তবে এখন আবার কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছি। তৃণমূল পর্যন্ত ছাত্রলীগকে আবার সংগঠিত করতে আমরা দ্রুতই পদক্ষেপ নিয়েছি। জেলা ইউনিট মিলিয়ে ৩৫টির মতো কমিটি করা হয়েছে।’

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য

জেলা পর্যায়ে কমিটিতে অনেক বিতর্কিতের স্থান পাওয়া নিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্মেলন ছাড়া একটি জেলায় কমিটি করার সময় আমরা নেতাদের যোগ্যতা যাচাই করার জন্য জীবনবৃত্তান্ত বিশ্লেষণ করেছি। খোঁজখবর নিয়েই কমিটি করা হয়েছে। জেলা কমিটি করতে গেলে ৫ থেকে ১০ জন যোগ্য প্রার্থী থাকে। আমরা আবার স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় করি। সে ক্ষেত্রে আমরা দুজনের বেশি কাউকে খুশি করতে পারি না। যারা নেতৃত্বে আসতে পারে না, তাদের তো নানা বিষয়ে আপত্তি থাকেই।’

তিনি বলেন, ‘যোগ্যতার বাইরে গিয়ে কাউকে নেতা বানানো হয়নি।’

গত বছর কেন এত প্রেস রিলিজ কমিটি দেওয়া হলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারণ হলো করোনা মহামারির কারণে সম্মেলন করা গেল না। তবে আমরা এখন সম্মেলনের মধ্য দিয়েই কমিটি করছি। তবে ওই সময় (করোনার মধ্যে) অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে এমন কমিটিই আমরা করেছি। আমরা যেহেতু জানি সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করতে পারব না।’

ছাত্রলীগের আগামী সম্মেলন কবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন ১৯৮১ সাল থেকে সংগঠনের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই সম্মেলন হচ্ছে। তিনি আমাদের সর্বোচ্চ অভিভাবক। নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা থাকতেই পারে। কিন্তু এটা তিনি (শেখ হাসিনা) ছাড়া কেউ আসলে জানেন না।’

সাংগঠনিক নেত্রীকে সম্মেলনের কথা জানিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা করোনার মধ্যে সম্মেলন নিয়ে কথা বলেছি প্রায় ছয় মাস আগেই। তখন সম্মেলন করার মতো কোনো নির্দেশনা ছিল না। আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবকের মাধ্যমেই দলীয় সম্মেলন হবে। তিনি যখন চাইবেন তখনই হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর