ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকার শান্তিনগর গ্রামে বৃদ্ধা জোহরা খাতুনকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে তারই ছোট ছেলে জামির খাঁর বিরুদ্ধে। রোববার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জমি নিয়ে ৩৬ বছর ধরে চলা একটি বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে নিজেরা সুবিধা আদায় করতেই ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। ৭৮ বছর বয়সী নিহত জোহরা খাতুন শান্তিনগর গ্রামের প্রয়াত রশিদ খাঁর স্ত্রী।
গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন জমির খাঁ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা জামিরের ঘর থেকে উদ্ধার হলে সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটক করে পুলিশ।
পরিবারের লোকজনের মুখোমুখি করা হলে জামির খাঁ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। পরে সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল ইসলামের আদালতে সোপর্দ করা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
এর আগে গত রোববার দুপুরে বৃদ্ধা জোহরা খাতুনকে নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় জামিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর খাঁ বাদী হয়ে আখাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
জামিরের পরিবারের লোকেরা অভিযোগ করেন, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী আত্মীয়রা বৃদ্ধা জোহরাকে খুন করেছে। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিপক্ষের তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, প্রয়াত রশিদ খাঁর পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী আত্মীয় বজলু খাঁর পরিবারের জায়গা নিয়ে বিরোধ ছিল। সম্প্রতি আদালতের রায় পক্ষে গেলে রশিদ খাঁর পরিবারের লোকজন জায়গাটি দখলে নিয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে।
রোববার দুপুরে ওই সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলে প্রতিপক্ষ। পরে তারা রশিদ খাঁর বাড়িতে হামলা করে।
ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে বৃদ্ধার ছেলে জাহাঙ্গীর খাঁ অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষের ফজল খাঁ, ইয়াছিন খাঁসহ আরও কয়েকজন বাড়িতে ঢুকে হামলা চালিয়ে তার মাকে হত্যা করেছে।
পরে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা নিহতের বাড়িতে পাওয়া গেলে সন্দেহ পাকাপোক্ত হয় পুলিশের। পরে রাতেই পুলিশ জামিরকে আটক করে।
জামিরকে আটকের পরই ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। পুলিশ কখনও কঠোর হয়ে, কখনও কৌশলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। পরে পরিবারের লোকজনের সামনে এনে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন জামির।
জামির দাবি করেন, জায়গা নিয়ে বিরোধে তারা অতিষ্ঠ। আদালতের রায় পেলেও তারা ভোগদখল করতে পারছিলেন না। গত রোববার প্রতিপক্ষ জায়গার সীমানাপ্রাচীর ভেঙে বাড়িতে হামলা করলে তাদের ফাঁসানোর জন্য হুট করে রাগের মাথায় মাকে হত্যা করেন।
এ ব্যাপারে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, রোববার গ্রেপ্তারকৃত প্রতিপক্ষের তিনজনের বিরুদ্ধেও বেআইনিভাবে দলবদ্ধ হয়ে আক্রমণের অভিযোগে মামলা হয়েছে।