করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে সব ক্ষেত্রেই টিকাগ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সরকার।
সচিবালয়ে সোমবার এ-সংক্রান্ত এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টিকা যেন সবাই গ্রহণ করেন। টিকা যারা নিয়েছেন তারা রেস্টুরেন্টে যেতে পারবেন, অফিসে যেতে পারবেন, বিভিন্ন কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারবেন মাস্ক পরা অবস্থায়।
‘কিন্তু টিকা যদি না নিয়ে থাকেন, তারা কিন্তু রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে পারবেন না। কারণ দেখাতে হবে টিকার সার্টিফিকেটটা। তবেই রেস্টুরেন্ট তাকে এন্টারটেইন করবে, যদি এটা না করে তাহলে সেই রেস্টুরেন্টকেও জরিমানা করা হবে।’
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ মন্ত্রিসভা বিভাগ প্রজ্ঞাপন আকারে জানিয়ে দেবে বলে জানান তিনি।
ওমিক্রন ঠেকাতে আপাতত লকডাউনে যাওয়ার কোনো চিন্তা নেই বলে জানান জাহিদ মালেক। তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘লকডাউনের সুপারিশ আমরা করিনি। সেই পরিস্থিতি এখনও হয়নি। সেই পর্যায়ে যাতে আমাদের যেতে না হয়, এ জন্যই আমাদের আজকের এই প্রস্তুতি সভা। আমরা আগে যা যা স্টেপ নেয়ার নিই, তারপরে দেখা যাবে।
‘এই মুহূর্তে আমরা লকডাউনের কথা ভাবছি না, আমরা জোর দেব প্রতিরোধের বিষয়ে। যেসব পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, করোনা নিয়ন্ত্রণে সেখানেই জোর দেয়া হবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে শিক্ষার্থীদের টিকা নেয়ার ওপরও জোর দেন তিনি। বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু থাকবে কিন্তু বলা হয়েছে, টিকাটা তারা যেন গ্রহণ করে। স্কুল-কলেজের যারা ছাত্রছাত্রী আছে তারা টিকা নেয়ার বিষয়ে একটু আমি মনে করি ঢিলেঢালা ভাব আছে।
‘আমরা চাচ্ছি যে এটাকে যাতে আরও জোরদার করা হোক। আমরাও সহযোগিতা করব। আহ্বান করছি স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা যাতে দ্রুত দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।’
মাস্ক না পরলে জরিমানা
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে সব ক্ষেত্রে মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘যত অনুষ্ঠান আছে, সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোর সংখ্যা যাতে সীমিত করা হয়। এ বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে এবং নীতিগতভাবে এ বিষয়ে কিছুটা পজিটিভ আলোচনাই হয়েছে।
‘পরিবহনে যে ক্যাপাসিটি আছে, সেই সিট কমিয়ে যাতে চলাচল করে, এ বিষয়টিতে আলোচনা হয়েছে। আশা করি এ বিষয়ে আমরা একটি সিদ্ধান্ত পাব। কোনো ক্ষেত্রেই… দোকানপাটে যে যাবে তাকে মাস্ক পরে যেতে হবে। বাসে উঠলে, ট্রেনে উঠলে, মসজিদে গেলে মাস্ক পরতেই হবে। অর্থাৎ সব জায়গায় মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক না পরলে তাকে জরিমানা করা হবে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে, এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেগুলো এখনই সব বলে দেয়া যাবে না। কারণ এগুলো কেবিনেট থেকে জানানো হবে। আমাদের যখন আলোচনায় যেতে বলা হলো, আমরা জানিয়েছি আমাদের হাসপাতালগুলো প্রস্তুত আছে।
‘আমাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ১২০টি স্থাপন করা আছে। আমাদের টিকা কার্যক্রম চলমান আছে। আমাদের ২০ হাজার বেড আমরা সবই রেখে দিয়েছি। এখন ডাক্তাররাও প্রশিক্ষিত, তারা জানেন কীভাবে করোনার চিকিৎসা করতে হয়। দেশবাসীও বিষয়টি জানেন।’
তিনি বলেন, ‘আশঙ্কার বিষয় হলো করোনা বেড়ে যাচ্ছে। আজকের কথা যদি বলি তাহলে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছ, যেটা ১-এর নিচে নেমে গিয়েছিল, এটা আশঙ্কাজনক। মৃত্যুর হার যদিও এখনও কম আছে, কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে গেলে মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই।
‘আপনারা জানেন এটা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আবারও লকডাউনের কথা চলে আসবে, আবারও স্কুল-কলেজ নিয়ে চিন্তাভাবনা হবে। আবারও আমাদের পরিবহনের কিছু চিন্তাভাবনা থাকবে। সবকিছুর ওপরেই একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, যেটা আমরা চাই না। এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পোর্ট যেগুলো আছে, ল্যান্ড পোর্ট- সি পোর্ট- এয়ারপোর্ট যেগুলো আছে, সেখানে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা আরও বাড়ানো ও মজবুত করা, যেটা আমরা ইতিমধ্যে করেছি। আমরা এখানে অ্যান্টিজেন টেস্ট করছি, পিসিআর টেস্টও করছি।
‘কোয়ারেন্টিনে আরও তাগিদ দেয়া হয়েছে। যদি কেউ ইনফেকটেড থাকে, তাহলে তাকে যথাযথভাবে কোয়ারেন্টিনের মধ্যে রাখা হোক এবং সেটা পুলিশ প্রহরায়, যাতে কোয়ারেন্টিন থেকে লোক বেরিয়ে না যায়। এমন ঢিলেঢালা কোয়ারেন্টিন আমরা চাচ্ছি না।’
সচিবালয়ের মন্ত্রিসভা বিভাগের সভাকক্ষে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার পর শুরু হয় এ বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিসভা সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এতে উপস্থিত ছিলেন।
আফ্রিকার বতসোয়ানায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার ধরন ওমিক্রন সারা বিশ্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে আফ্রিকা, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
বাংলাদেশেও এরই মধ্যে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বাংলাদেশে প্রথম ওমিক্রন শনাক্তের তথ্য দেয়া হয় ১১ ডিসেম্বর। ওমিক্রন ঠেকাতে এরই মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।