বিষয়টি নতুন নয়, কিন্তু হঠাৎ করেই সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড়ের পর বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রতিবেদন আসছে।
কারও ব্যাংক হিসাবে বছরের কোনো একটি সময়ে ১ লাখ টাকা জমা হলেই সেই হিসাব থেকে সরকার ১৫০ টাকা কেটে রাখছে, যা পরিচিত আবগারি শুল্ক হিসেবে। কোনো হিসাবে ৫ লাখ টাকা বেশি হলে শুল্ক আরও বাড়ে।
বিদায়ী ডিসেম্বরে সরকার নির্ধারিত হারে আবগারি শুল্ক কাটছে ব্যাংকগুলো। আর এসএমএস ব্যাংকিংয়ের যুগে সেই তথ্যটি গ্রাহককে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনেকেই বুঝতে পারছেন না কেন টাকা কাটছে।
বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছরই এভাবে একবার আবগারি শুল্ক কাটা হয়। এটি ব্যাংকের কোনো সেবা মাশুল নয়। ২০২০ সালের জুলাই থেকে হিসাব করে বছরান্তে এখন সেই অর্থ রাজস্ব বোর্ডের হয়ে কেটে নিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
বছর শেষ হওয়ায় এখন সবার হিসাব থেকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী টাকা কেটে রাখা হচ্ছে বলে জানান অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম। তিনি বলেন ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী আবগারি শুল্ক কাটা হচ্ছে। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’
কাদের হিসাব থেকে এই টাকা কাটা হচ্ছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সারা বছরে যদি ব্যাংক হিসাবে স্থিতি ১ লাখ টাকার কম থাকে, তাহলে কোনো আবগারি শুল্ক দিতে হবে না। কিন্তু সারা বছরের কোনো সময় যদি ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫ লাখ টাকার কম থাকে, তখন ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হচ্ছে।’
সরকারের শুল্ক-কর আদায়কারী সংস্থা এনবিআরের পক্ষে ব্যাংকগুলো পঞ্জিকাবর্ষ (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) ধরেই আবগারি শুল্ক কেটে রাখে। এরপর তা সরকারি কোষাগারে জমা করে।
২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আবগারি শুল্ক আদায় হয়েছে।
আবগারি শুল্কের হার
ব্যাংক হিসাবে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১ লাখ টাকার কম থাকে তাহলে কোনো আবগারি শুল্ক বসে না। অর্থাৎ বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত থাকলে তা আবগারি শুল্কমুক্ত।
আর ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা থাকলে ১৫০ টাকা এবং ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত থাকলে ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়।
এ ছাড়া ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকায় ৩ হাজার টাকা; ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকায় ১৫ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার ওপরে থাকলে ৪০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ হয়।
বছরে একবারই এই আবগারি শুল্ক নেয়া হয়ে থাকে।
প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়ী হিসাব (যেমন, বেতন-ভাতার টাকা কিংবা সারা বছর যেসব হিসাবে লেনদেন হয়) থেকে আবগারি শুল্ক কাটে ব্যাংকগুলো। কারণ ব্যাংকের হিসাব-নিকাশের সময় জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস।
অন্যদিকে স্থায়ী আমানতের হিসাবের ক্ষেত্রে যখন এফডিআর মেয়াদপূর্তি হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে আবগারি শুল্কের টাকা কেটে রাখা হয়।