এবার ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়লেও আদায় কিছুটা কমে গেছে।
২ জানুয়ারি পর্যন্ত তৈরি করা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১-২২ করবর্ষে মোট আয়কর রিটার্ন জমা পড়ে প্রায় ২৩ লাখ। এর বিপরীতে কর আদায় হয়েছে ৩ হাজার ২৮১ কোটি টাকা।
গতবার এই সময়ে ২১ লাখ ৫১ হাজার ৩২৬টি রিটার্নের বিপরীতে কর আহরণ হয়েছিল ৪ হাজার ১০ কোটি টাকা।
গতবারের তুলনায় রিটার্ন ১ লাখ ৪৮ হাজার বা প্রায় ৭ শতাংশ বাড়লেও কর আদায় কমে গেছে ৭২৯ কোটি টাকা বা শতকরা ৯ ভাগ।
ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ছিল ২ জানুয়ারি রোববার পর্যন্ত। এর এক দিন পর সোমবার হিসাব চূড়ান্ত করেছে এনবিআর।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেছেন, রিটার্নের সংখ্যা আরও বাড়বে। কারণ, যারা সময় চেয়ে আবেদন করেছেন, তাদের হিসাবে বিবেচনায় আনা হয়নি।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এবার সময় চেয়ে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮২ জন। এদের আবেদন গ্রহণ করলে রিটার্ন সংখ্যা ২৬ লাখ ৬২ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
নিয়ম অনুযায়ী, নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর কেউ আবেদন করতে পারেন, যাকে বলা হয় রিট পিটিশন। আবেদন নিষ্পত্তি হতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। ফলে রিটার্ন জমার চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে আগামী জুনের পর।
গতবার আবেদনসহ রিটার্ন জমা পড়েছিল প্রায় ২৪ লাখ ৩১ হাজার।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর রিটার্ন জমার শেষ সময় ছিল ৩০ নভেম্বর। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সেটা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
শেষ দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় রোববার পর্যন্ত আরও এক দিন সময় বেড়েছে।
আয় থাকুক আর নাই থাকুক, ব্যক্তিশ্রেণি করদাতার বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। যার কোনো আয় নেই, তিনি রিটার্নে আয় শূন্য দেখাতে পারবেন।
বর্তমানে কোনো ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও যাতায়াত ভাতা বাদ দিয়ে বছরে আয় ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত। এর বেশি আয় হলে প্রযোজ্য হারে কর দিতে হয়।
আয়ের স্তরভেদে সর্বনিম্ন কর হার ৫ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ৭০ লাখের বেশি।
রিটার্ন জমার সময় বারবার বাড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে ২০১৬ সাল থেকে ৩০ নভেম্বর আয়কর দিবসে রিটার্ন দাখিলের শেষ দিন নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে সে বছরই সংসদে আইন পাস হয়।
অনলাইনে রিটার্ন জমা ৬১ হাজার
অনলাইনে রিটার্ন জমা দেয়ার সুযোগ চালু হওয়ার পর এ পদ্ধতিতে রিটার্ন জমার আগ্রহ বাড়ছে। এনবিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার ৬১ হাজার ২০৩ জন করদাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। সে হিসাবে মোট রিটার্নের শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ অনলাইনে জমা পড়েছে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর থেকে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেয়ার পদ্ধতি চালু হয়।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে অভ্যস্ত হতে করদাতার একটু সময় লাগবে। আশা করা যাচ্ছে আগামী বছর থেকে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ৭০ হাজার করদাতা অনলাইনে সময় চেয়ে আবেদন করেন। অনলাইনে নতুন করে নিবন্ধন নেন ১ লাখ ৫ হাজার ৫২১ জন।