এনা পরিবহনের যে বাসটি সড়ক বিভাজক ভেঙে অপর পাশের মাইক্রোবাসের ওপর উঠে গিয়েছিল, সেই ঘটনায় করা মামলা তুলে নেয়া হয়েছে। মাইক্রোবাসের মালিক ৬০ হাজার টাকা নিয়ে আপস করেছেন বাসমালিক সমিতির মহাসচিবের কোম্পানিটির সঙ্গে।
এই ঘটনায় করা মামলাটি দুর্ঘটনার ছয় দিনের মাথায় সোমবার প্রত্যাহার করা হয়। মাইক্রোর মালিক আদালতে গিয়ে বলেন, তিনি আর মামলা চালাতে আগ্রহী নন।
তবে এনার যে বাসচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাকে এখনও ছাড়া হয়নি। দুর্ঘটনার পর কোম্পানির মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানিয়েছিলেন, বাসটি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী। তাকে এই কয় দিনে গ্রেপ্তারই করা যায়নি।
কিন্তু মামলাটি যেহেতু প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে, তাই যিনি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন বলা হচ্ছে, তাকে কোনো সাজাই পেতে হচ্ছে না।
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় এনা পরিবহনের বাসটি সড়ক বিভাজক ভেঙে অপর পাশের মাইক্রোবাসের ওপর উঠে যায়। ফাইল ছবি
গত ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় তুমুল আলোচিত এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। এরপর এনা পরিবহনের বিরুদ্ধে বেপরোয়াভাবে বাস চালানোর পুরোনো অভিযোগটি সামনে আসে। গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলায় এই দুর্ঘটনাটি অনেকটাই প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে থাকে মানুষ। সড়ক বিভাজকের উল্টো পাশের মাইক্রোর ওপরে উঠে থাকা এনার বাসের ছবি হাজার হাজার মানুষ শেয়ার করতে থাকে।
সেই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোবাসের চালক সাহাদত খিলক্ষেত থানায় সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮ ধারায় মামলা করেন। সেদিনই এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ গণমাধ্যমকে জানান, তারা মাইক্রোবাসমালিককে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেবেন।
কত টাকা ক্ষতিপূরণ দিলেন খন্দকার এনায়েত উল্লাহ? তদন্ত কর্মকর্তা, মাইক্রোবাসের চালক ও মালিক আর এনা পরিবহনের সঙ্গে আলোচনা করে বেরিয়ে এল, মোট ৬০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে মাইক্রোবাসের মালিককে। আর যে সড়ক বিভাজকটি ভেঙে এনার বাস রাস্তার অপর পাশে চলে গিয়েছিল, সেটি মেরামত করতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে দিতে হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা।
দুর্ঘটনায় আহত মাইক্রোবাসের চালক সাহাদত হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এখন সুস্থ আছি।’
আপনার মালিককে কি টাকা দিয়েছে?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ, টাকা দিছে। কিন্তু কয় টাকা দিছে আমি জানি না, মালিক জানে।’
মাইক্রোবাসের মালিক মো. সাব্বির বলেন, ‘এনা পরিবহন আমারে ক্ষতিপূরণ দিছে ৬০ হাজার টাকা।’
আপনি এই ক্ষতিপূরণে সন্তুষ্ট কি না- জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে কয়েকবার ফোন দিলে তিনি আর তা ধরেননি।
কীভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা নির্ধারণ হলো- এই প্রশ্নে এনা পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক আতিকুল আলম আতিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত মাইক্রোবাসটি ঠিক করতে আমরা একটা মিস্ত্রি দেখিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, গাড়ি ঠিক করতে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা লাগবে। পরে গাড়ির মালিকের সঙ্গে আমাদের আপস-মীমাংসা হয়েছে।’
আপনারা কি পুরো টাকাটাই তাদের দেবেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘যেহেতু একটা মামলা হয়েছে, তাকে তো কোর্টে গিয়ে বলতে হবে আমাদের আপস-মীমাংসা হয়েছে। আমরা বলেছি আমরা ৬০ হাজার টাকা দেব। বাকি কিছু লাগলে আপনারা ঠিক করে নিলেন। তিনি আমাদের কথায় রাজি হয়েছেন।
“মাইক্রোবাসের মালিকের কোর্টে যাওয়ার কথা। সেখানে আমাদের দুইজন ম্যানেজার গেছেন। ম্যানেজার মাইক্রোবাসের মালিককে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দেবেন। আর তিনি কোর্টে বলবেন, ‘আমি এই মামলা চালাতে চাই না।’
“এ রকম ফাইনাল কথা হয়েছে তার সঙ্গে। একটু আগে আমার ম্যানেজারের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওনাকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে দেয়া হয়েছে।”
ওই দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের যে চালক আহত হয়েছিলেন, তার জন্য কী করলেন আপনারা?- এমন প্রশ্নে এনার কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই ড্রাইভার কোনো আহত হন নাই। ব্যথাও পান নাই। গাড়িটাই শুধু সামনের অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আইল্যান্ডের ওপরে বাস থাকায় গাড়ির ওপর ওভাবে চাপ পড়ে নাই।’
সড়ক বিভাজক ভাঙার জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে দেয়া জরিমানার বিষয়ে আতিকুল আলম বলেন, ‘যে আইল্যান্ডের ওপরে আমাদের বাস উঠেছিল, ওই আইল্যান্ডের ক্ষতি হয়। রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের একজন অফিসার এসেছিলেন। থানায় বসে লিখিতভাবে এটা ঠিক করার জন্য আমরা তাদের ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছি।’
খিলক্ষেত থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাবরিনা রহমান বলেন, ‘এ ঘটনার পরে ওই গাড়ির চালককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে জানতে পারলাম এই গাড়ি হেলপার চালাচ্ছিলেন। এটা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে আমরা এখনও ওই হেলপারকে গ্রেপ্তার করতে পারি নাই।’