বাণিজ্য মেলা মানেই লোকেলোকারণ্য, লাইন ধরে টিকিট কাটা, অনেকক্ষণ টিকিটের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা। তবে এবার মেলার তৃতীয় দিন সোমবার বিকেল পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা যায়নি। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হলে আসতে শুরু করে মানুষ।
করোনার কারণে এক বছর বিরতি দিয়ে ১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। তবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের চিরচেনা জায়গায় নয়, মেলা হচ্ছে পূর্বাচলে স্থায়ী অবকাঠামোয়।
বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মেলায় সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন। তবে ছুটির দিন খোলা থাকবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের টিকিট ৪০ টাকা। শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে ২০ টাকা।
বিকেলে মেলায় আসেন রূপগঞ্জের বাসিন্দা সোহেল আহমেদ, সঙ্গে স্ত্রী, কোলে শিশুসন্তান। তিনি বলেন, ‘আগারগাঁও মেলায় গিয়েছিলাম কয়েকবার, এখানেও আসছি। তবে দুটি জায়গা দুই ধরনের। এখানে ধুলাবালি কম আর সবকিছু গোছানো ও পরিকল্পিত।
‘এতদিন আমার আগারগাঁও মেলায় যেতে কষ্ট হতো। এখন তো আমাদের বাড়ির পাশে চলে আসছে। ঢাকার অন্য প্রান্ত থেকে যারা আসবেন, তাদের জন্য একটু কষ্ট হবে।’
একই এলাকার হোসনে আরা ও আমেনা বেগম এসেছেন মেলায় ঘুরতে। তারা জানান, বাড়ির কাছে হওয়ায় মেলা দেখতে এসেছেন। নাতিকেও এনেছেন।
মেলায় দর্শনার্থীদের অনেককেই স্টল ছেড়ে বাইরে খোলা প্রাঙ্গণে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। তাদের বেশির ভাগই সেলফি বা ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন।
মেলায় আসা প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তিন বন্ধু হ্যাপি, আরিফ ও সাদেক। তারা জানান, প্রথমবারের মতো এই মেলা পূর্বাচলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সবাই বলছে, এবারের মেলার ভবনটি অনেক চমৎকার। তাই বন্ধুরা মিলে দেখতে এসেছেন। তবে আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে। প্রচুর ধুলাবালি ছিল।
মেলা গেটের দায়িত্ব পালন করা কর্মীরা জানান, সকাল থেকে দুপুরের পর পর্যন্ত মানুষ অনেক কম ছিল। তবে ৩টার পর থেকে ধীরে ধীরে মানুষ বাড়তে শুরু করেছে। সন্ধ্যার পর কিছুটা ভিড় বেশি থাকে।
রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আসা দর্শনার্থী আনোয়ার আহমেদ বলেন, ‘এবার মেলার আয়োজনও অনেক সীমিত। স্টলগুলোও ছোট-ছোট। বড় কোম্পানির স্টল নেই। তা ছাড়া কোন কোম্পানির স্টল কোথায় আছে তাও বুঝতে পারছি না। এই তথ্য কেউ দিতে পারছে না।’
মেলায় ওয়ালটন স্টলের দায়িত্বে মো. বাদল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যেকবার তো বাণিজ্য মেলায় ওয়ালটনের বড় ও বহুতল প্যাভিলিয়ন তৈরি করা হয়। কিন্তু এই মেলায় কিছু দিক থেকে বিধিনিষেধ রয়েছে। নির্দিষ্ট উচ্চতা এবং নির্দিষ্ট আকার মেনে স্টলগুলো তৈরি করতে হয়। তিন দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থী কিছু কম হলেও সন্তোষজনক বলা যায়।
‘দিনে তিন হাজারের বেশি দর্শনার্থী ওয়ালটনের স্টল ভিজিট করছে। আমরা মূলত মেলাই আসি আমাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি মানুষের সামনে তুলে ধরতে। মেলায় এলে স্বল্প সময়ে বেশি মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেয়া যায়।’
মেলার টিকিট ইজারাদার মীর শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাণিজ্য মেলা শুরুর দিনগুলোয় দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের ভিড় একটু কম থাকে। তবে এবার অনেক কম। মেলার প্রথম দিনে প্রায় আট হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। রোববার হয়েছে সাড়ে চার হাজারের মতো। সোমবার চার হাজারের বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে না।
‘তবে আশা করছি ১৫ তারিখের পর থেকে মেলায় ক্রেতা সমাগম বাড়বে। আসলে আগারগাঁওয়ের সঙ্গে এখানে তুলনা করলে তো হবে না। আগারগাঁওয়ে ক্রেতা না থাকলেও দিনে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আসত।’
এ বছর মেলায় অন্য বছরের তুলনায় অর্ধেকসংখ্যক স্টল রয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি ফুড স্টল রয়েছে। তুর্কি, ইরান, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ১০টি স্টল।