প্রথমবারের মতো পূর্বাচলে স্থায়ী ভেন্যুতে হওয়া বাণিজ্য মেলা তৃতীয় দিনেও পুরোপুরি শুরু হতে পারেনি। নতুন ভেন্যু হলেও সেই পুরোনো ঠুকঠাক শব্দ এখনও রয়েছে আগের মতোই।
সোমবার মেলার তৃতীয় দিন এমন চিত্র দেখা গেছে। বেশ কিছু স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণ অসমাপ্ত রয়েছে। সব মিলিয়ে মেলার প্রায় ২০ শতাংশ স্টলের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।
এর আগে বাণিজ্য মেলা বলতে বোঝাত আগারগাঁওয়ে অবস্থিত অস্থায়ী মেলা প্রাঙ্গণকে। স্থায়ী কোনো অবকাঠামো না থাকায় সেখানে মেলা শুরুর প্রায় ১০ দিন, এমনকি মেলার অর্ধেক সময় পর্যন্ত চলত প্যাভিলিয়ন নির্মাণে ইট-কাঠের ঠুকঠাক শব্দ।
পূর্বাচলে মেলার প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই সামনে পড়ে বিশাল দৃষ্টিনন্দন কাঠামো। তবে দৃষ্টি একটু ডানে গেলেই চোখে পড়বে নির্মাণশ্রমিকদের স্টল তৈরির কাজ। কানে যাবে কাঠে পেরেক ঠোকার ঠুকঠাক শব্দ। এই সারির অধিকাংশ স্টল নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি।
একটু সামনে এগিয়ে গেলে হাতুড়ি-পেরেক দিয়ে ইটের ঠোকাঠুকির শব্দ। কেউ কেউ সবুজ ও প্রাকৃতিক একটা ভাব দিতে বিভিন্ন রঙের ফুল দিয়ে প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছেন। তবে এই পথের শুরুতে মার্কস ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের স্টল সুন্দর করে সাজানো।
সামনে গেলে অসম্পূর্ণ স্টলের প্রথমে রয়েছে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের স্টল। সরকারি প্রতিষ্ঠানটি মাত্রই নিজেদের নামফলক বসাচ্ছে। ভিতরে সাজসজ্জা ও আসবাবপত্র সংযোজনের কাজ এখনো বাকি। স্টলের পাশে চেয়ার-টেবিলসহ নানা সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা। সামনে এগোলেই রাস্তার ওপর বালিশ স্তূপ করে রাখা; তারপর কাঠসহ ময়লা আবর্জনা রাস্তায়। যেখানে হাঁটাই দায়।
ডান পাশে আরও কয়েকটি স্টলের কাজ চলছে, যেগুলো বেশির ভাগই ফাঁকা। কাজ শেষ করতে আরো কয়েক দিন লাগবে জানান নির্মাণশ্রমিকরা। একেবারে পথের মাথা পর্যন্ত একই অবস্থা, ইরানি পণ্যের স্টল পুরোটাই খালি, এক কর্নারে মাত্র পণ্য সাজানোর কাজ চলছে। বামে মোড় নিলেও একই চিত্র চোখে পড়ে। এর পরে বেশ কিছুটা জায়গা ফাঁকা। তবে রাস্তার পাশে প্লাস্টিক ও টিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে স্টলগুলোর পণ্যসামগ্রী।
মূল ভবনের পূর্ব পাশে স্টলগুলোর নির্মাণকাজ চলছে। একটু এগিয়ে গেলে রাস্তার পাশে ১৫টির মতো স্টল ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এই সারির মাথায় শুধু বিআরবি হাসপাতালের মেডিক্যাল ক্যাম্পের স্টলটি চালু রয়েছে। আর একটু সামনে এগিয়ে গেলে মেলার পূর্ব-উত্তর কর্নারে বসেছে খাবারের দোকানগুলো। কয়েকটি খাবারের দোকান চালু হলেও কয়েকটিতে চলছে নির্মাণকাজ। খাবারের এলাকা পেরিয়ে সামনের কয়েকটি স্টলের অবস্থা একই রকম।
মেলার মূল ভবনের পূর্ব পাশের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেও চোখে পড়ে অসম্পূর্ণ স্টল। আবদ্ধ হলঘর হওয়ায় এখানে প্রবেশ করলেই স্টল নির্মাণের কারণে হাতুড়ি-পেরেক ঠোকার শব্দ কানে তালা লাগার অবস্থা। এর সঙ্গে রয়েছে ইলেকট্রিক করাত ও ড্রিল মেশিনের শব্দ। তবে হলঘরের মাঝ বরাবর স্টলগুলো সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়েছে মেলার শুরু থেকেই। উত্তর পাশে স্টলগুলো আবার অসম্পূর্ণ।
নির্মাণাধীন একটি স্টলের নির্মাণশ্রমিক নয়ন জানান, দুদিনের মধ্যেই স্টলটি তৈরি হয়ে যাবে।
নির্মাণাধীন ফেব্রিক্স-এর একটি স্টলের কর্মী প্রিন্স বলেন, ‘দোকান দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে। আমাদেরকে সময় দিয়েছিল স্টল নির্মাণের, কিন্তু নিজেদের কারণে একটু দেরি হচ্ছে।’
তবে মেলার ভিআইপি গেটের পাশে মূল ভবনের পশ্চিম পাশের হলটি সেদিক থেকে কিছুটা সাজানো-গোছানো। তবে এই হলেও একেবারে পশ্চিম পাশে বেশ কয়েকটি স্টলের কাজ বাকি রয়েছে।
এ বিষয়ে মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী নিউজ বাংলাকে বলেন, ‘পূর্বাচলে মেলা প্রথমবার, তাই একটু গুছিয়ে নিতে সময় লাগছে। তবে ইপিবি থেকে আগেই স্টলগুলোর মূল কাঠামো তৈরি করে দেয়া আছে।
‘যারা স্টল বরাদ্দ পেয়েছেন তারা নিজের মনমতো বিভিন্ন ডিজাইন করতে গিয়েই স্টল নির্মাণে দেরি করছেন। আশা করি এই সপ্তাহের মধ্যেই সব স্টল তৈরি হয়ে যাবে।’