নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে প্রচার চালানোর নামে সোনারগাঁয়ের এক যুবলীগ নেতার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ওই যুবলীগ নেতার ফোনালাপ ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনা চলছে বন্দরনগরীতে।
বিষয়টি নিয়ে চটেছেন নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে দাবি করে তিনি সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন, এ বিষয়ে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।
তবে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনজীবী খোকন সাহার দাবি, মামলা পরিচালনায় তিনি তার মক্কেলের (যুবলীগ নেতা) কাছ থেকে টাকা চেয়েছেন। এর বাইরে কিছু নয়।
যদিও যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম নান্নুর ভাষ্য, ওই নেতার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
খোকন সাহা এবারের নির্বাচনে আইভীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। অনেকে তাকে শামীম ওসমানের বন্ধু বলেও চেনেন।
তিনি নৌকা প্রতীকের আশায় দলীয় মনোনয়ন ও ফরম সংগ্রহ করেছিলেন, তবে দল আইভীকে মনোনয়ন দেয়। এরপর খোকন বিজয় সমাবেশে গিয়ে আইভীর পক্ষে থাকার কথা জানান।
রফিকুল ইসলাম নান্নু সোনারগাঁ যুবলীগের সভাপতি।
তার ও খোকনের ফোনালাপ থেকে বোঝা যায় সেটি ২৪ ডিসেম্বরের। দুই মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের অডিওটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
যুবলীগ নেতা নান্নু: হ্যালো
খোকন সাহা: নান্নু?
নান্নু: হ্যাঁ
খোকন: খোকন সাহা বলছি।
নান্নু: হ্যাঁ, আসসালামু আলাইকুম। দাদা কেমন আছেন?
খোকন: কই, কী করতেছ?
নান্নু: এই তো দাদা, আছি।
খোকন: শোনো, আমি তো আইভীর পক্ষে।
নান্নু: হ্যাঁ
খোকন: তুমি জানো, শামীম ওসমানও আইভীর।
নান্নু: হ হ
খোকন: সবকিছু ঠিক আছে। আমার একটু টাকা-পয়সা লাগব। তোমায় কিন্তু পরিষ্কারভাবে বলে দেই। তোমার পক্ষে কেউ নাই। তোমার নামের ওপর অনেকেই অনেক কথা কয়। আমি তো দলের কাজ করতেছি। আইভীকে পাস করানোর জন্য কাজ করতেছি। বুঝছ?
নান্নু: জি দাদা।
খোকন: নান্নু, আমার তো টাকা লাগব। টাকা লাগব।
নান্নু: আপনের লাগব, ইয়া করব। অসুবিধা নাই।
খোকন: কালকে তুমি পুরান কোর্টে আমার চেম্বারে অফিসে আসবা, কেমন?
নান্নু: আমি তো...
খোকন: আইভী তো আমার মাইয়া, জানো তো।
নান্নু: হ হ হ।
খোকন: কালকে ৫ লাখ টাকা পাঠায় দিবা।
নান্নু: আমি তো বৈদ্যেরবাজার নির্বাচনে আছি। আমাদের সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন না পরশু দিন!
খোকন: আরে দূর, পরশু দিন বাদ দাও।
নান্নু: আমাদের সোনারগাঁয়ে...
খোকন: আইভী পাস করলে...পরশু দিন তোমার নির্বাচন আছে, সবকিছু কাজ করমু।
নান্নু: হু হু
খোকন: কালকে ৫ লাখ টাকা বিকাল ৪টার সময় আমার চেম্বারে পাঠায় দিবা। পুরান কোর্টে। ঠিক আছে?
নান্নু: আমি ক্যারে? আমি কি আইভীর কিছু নাকি? আমি কিয়ের লাইগা টাকা পাঠাইতাম। আমি কিয়ের লাইগা করতাম, আমি তো আইভীর কিছুতে নাই। আমি তো সিটি করপোরেশনের কাজও করি না।
খোকন: তোমার সোনারগাঁয়ের কাজ আমি করে দিমু।
নান্নু: আইচ্ছা, দাদা। কথা কমুনে।
খোকন: টাকা যদি পাঠাও কালকে ৫ লাখ, কাজ করে দিমু তোমার। তুমি যেটা চাও করে দিমু। না পারলে উল্টো হয়ে যাইবগা।
নান্নু: আইচ্ছা ঠিক আছে। কইরেন।
খোকন: কালকে ৫টার সময় আমার চেম্বারে পুরান কোর্টে ৫ লাখ টাকা পাঠায় দিবা। তুমি দিবা, না দিবা তোমার ব্যাপার। আমি তোমারে বললাম। তোমারে অনেক পছন্দ করি। অনেক ভালোবাসি। ঠিক আছে?
নান্নু: আইচ্ছা দাদা। ঠিক আছে।
খোকন: টাকা যদি পাঠাও, তাইলে আমি তোমার সোনারগাঁয়ের কাজ করে দিমু।
নান্নু: আইচ্ছা দাদা।
খোকন: ক্লিয়ার কাট। তোমার যে ইচ্ছা ওইটা কইরা দিমু। আমার চেম্বারে তুমি ৫ লাখ টাকা পাঠায় দিবা কালকা। মাত্র ৫ লাখ টাকা।
নান্নু: আইচ্ছা দাদা।
খোকন সাহা: ওকে।
আইভীর পক্ষে নির্বাচনের নামে টাকা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খোকন সাহা তা অস্বীকার করেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি আইভীর পক্ষে নির্বাচন করার জন্য নান্নুর কাছে টাকা চাই নাই। সে (নান্নু) আমার মক্কেল। তার মামলা আমি দেখি। এ জন্য চাইছি।
‘আমার কাছে প্রমাণ আছে, নান্নুর মামলার দায়িত্ব আমার কাছে আছে। প্রয়োজনে আমি সংবাদ সম্মেলন করে তা পরিষ্কার করব।’
খোকন সাহার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন নান্নু। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা খোকন সাহার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। তার কাছে আমার কোনো মামলা নাই। তার সঙ্গে আমার কোনো দিন ১০ টাকার লেনদেনও হয় নাই। সে হঠাৎ করে আমাকে ফোন করে টাকা চাইছে।’
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিবের এমন ‘কাণ্ডে’ চটেছেন মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘আমি এর আগে তিনটা নির্বাচন করেছি। কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি। তার অমন আচরণ শোভনীয় নয়। উনাকে এমন কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি যে টাকা চাইতে হবে। এ সময় তার এ কাজ আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এ ব্যাপারে দল সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেবে।’
বিষয়টি নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগের নেতারাও। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় খোকন সাহার এমন আচরণে আমরা হতবাক হয়েছি। এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখানে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে।’