ফেসবুক স্ক্রল করার সময় একটি ছবিতে চোখ আটকে গেল। সে ছবিতে থাকা বোর্ডে লাল রঙে লেখা, ‘আম জনতার হোটেল।’ তার নিচে সবুজ রঙে উদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়ে লেখা, ‘এখানে খাবার খেয়ে যাবেন, টাকা নিয়ে ভাববেন না, যা ইচ্ছা তাই দিবেন, না থাকলে না দিবেন।’
ছবিটি যে পেজে পোস্ট করা হয়েছে, তার নাম পাশে আছি Initiative। এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত পঞ্চাশোর্ধ্ব স্বেচ্ছাসেবী ঢাকা ও বাইরের দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলোতে দুপুরে আর রাতে বসায় আম জনতার হোটেল। অস্থায়ী সে হোটেলের বিষয়ে জানতে কথা হয় পাশে আছি ইনিশিয়েটিভের সমন্বয়ক তাহমিদ হাসানের সঙ্গে।
কখন থেকে শুরু
এ বিষয়ে তাহমিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চে আমরা সাধারণ লোকজনের জন্য ঘরে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া, রান্না করা খাবার বিতরণের মতো কাজ করি। পরের বছরের (২০২১) এপ্রিলে করোনার সংক্রমণ বাড়লে আমরা আবার মাঠে নামি। সে সময়ে একটু ভিন্নভাবে কাজ করার চিন্তা থেকে এ উদ্যোগটি শুরু করি।’
তিনি বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষদের অন্তত এক বেলা ভালো খাওয়াতে পারাটা আনন্দের। আমরা সে জায়গা থেকেই কাজটা করছি।’
কারা খাবার খান
নিম্ন আয়ের মানুষরাই (রিকশাচালক, দিনমজুর) সাধারণত এ হোটেলে খেয়ে থাকেন, তবে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। যেকোনো পেশার মানুষ এ খাবার খেতে পারবেন। টাকা দেয়া, না দেয়া তাদের ওপর নির্ভর করে। হোটেলটিতে এক দিনে শতাধিক মানুষ এ খাবার পান।
সপ্তাহে কত দিন, কখন বসে হোটেল
তাহমিদ জানান, ঢাকায় আম জনতার হোটেলটি বসানো হয় গ্রিন রোড এলাকায়। সপ্তাহে এক বা একাধিক দিন হোটেলে খাবার পরিবেশন শুরু হয় রাত ১১টা থেকে। তারপর খাবার শেষ হওয়া পর্যন্ত চলে আয়োজন।
তিনি জানান, ঢাকার বাইরে চরাঞ্চল বা পিছিয়ে পড়া কমিউনিটির কারও উঠানে এ হোটেল বসে। আয়োজনের সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রভাবশালীদের রাখা হয়।
খাবার কোথায় রান্না হয়
তাহমিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কিচেন আছে। সেখানে একজন বাবুর্চি এ খাবার রান্না করেন।
‘আমরা খাবার হিসেবে দিই পোলাউ, রোস্ট ও ডাল। অনেকেই এগুলো খুব তৃপ্তির সঙ্গে খান।’
হোটেল চলে কাদের টাকায়
পাশে আছি ইনিশিয়েটিভের সমন্বয়ক বলেন, ‘এটা ডোনেশনের ওপর চলে। ডোনেট করা লোকজনের মধ্যে বড়লোক থেকে শুরু করে চায়ের দোকানদারও আছে। কেউ হয়তো ৫০ টাকা দেয়, কেউ আবার ১০ হাজার টাকাও পাঠায়।’
কোনো বাধা আছে কি
তাহমিদ বলেন, ‘আমরা মোটামুটি ফাঁকা ঢাকায় আয়োজনটা করি। গ্রামের আয়োজন হয় কারও উঠানে। সুতরাং এখানে কারও বাধা দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় না।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী
এ বিষয়ে পাশে আছি ইনিশিয়েটিভের উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এটা কন্টিনিউ করা। সময়ই বলে দেবে কী করতে হবে, তবে আমাদের সামর্থ্য বাড়লে সপ্তাহে সাত দিনই এভাবে মানুষকে খাওয়াতে চাই।’