বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওসমানীতে কেন এত সোনা

  •    
  • ৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০৯:৫৫

সিলেটের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সিলেটে অনেক জুয়েলারি দোকানেই চোরাচালানের স্বর্ণ বিক্রি হয়। প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় এই এলাকায় স্বর্ণের চাহিদাও বেশি। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখান থেকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারেরও সুযোগ রয়েছে।’

আয়রন মেশিন ও জুসারের ভেতরে ১১ কেজি ২০০ গ্রাম স্বর্ণ নিয়ে দুবাই থেকে ফিরছিলেন চার যাত্রী। সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে ২৭ ডিসেম্বর তাদের আটক করে কাস্টমস।

এর আগে গত অক্টোবরে দুবাইফেরত আরেক যাত্রীর কাছ থেকে আটক করা হয় প্রায় ৬ কেজি ওজনের স্বর্ণের বার।

শুধু এই দুইবারই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে ওসমানী বিমানবন্দরে প্রায়ই ধরা পড়ছে স্বর্ণের চালান।

কাস্টমসের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে প্রায় ১১০ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। এর দাম প্রায় ৫৮ কোটি টাকা।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বেড়েছে। এ কারণে স্বর্ণের চোরাচালানও বেড়েছে।

তবে হঠাৎ ওসমানী বিমানবন্দর থেকে প্রায়ই স্বর্ণের চালান উদ্ধার হওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, চোরাকারবারিরা কেন এই বিমানবন্দরকে স্বর্ণ চালানের নতুন রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে?

বিমানবন্দরের কাস্টমস বিভাগের উপকমিশনার আল আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চোরাচালানের বেশির ভাগ স্বর্ণই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে। প্রতি সপ্তাহেই দুবাই থেকে দুটি এবং জেদ্দা ও আবুধাবি থেকে একটি ফ্লাইট ওসমানীতে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বাড়ায় এই বিমানবন্দর দিয়ে চোরাচালানের সুযোগও বেড়েছে। তবে আমরাও তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করছি।’

সিলেটের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সিলেটে অনেক জুয়েলারি দোকানেই চোরাচালানের স্বর্ণ বিক্রি হয়। প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় এই এলাকায় স্বর্ণের চাহিদাও বেশি। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখান থেকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারেরও সুযোগ রয়েছে।’

তবে উপকমিশনার আল আমিন বলেন, ‘সিলেট দিয়ে আসছে মানে সিলেটেই এর চাহিদা বেশি এমন নয়। সিলেট দিয়ে এসে এগুলো অন্য কোথাও যেতে পারে। তারা যখন যেদিকে সুবিধা পায় সেদিক দিয়েই নিয়ে আসে।

জব্দকৃত সোনার পরিসংখ্যান বলছে, ওসমানী বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ৪০ কেজি সোনা জব্দ করে। এর বাজারদর প্রায় ২১ কোটি টাকা। এরপর ২০১৭-এর জুলাই থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জব্দ করা হয়েছে ৭০ দশমিক ২১৮ কেজি। এর দাম ৩৭ কোটি টাকা।

এই বিমানবন্দরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে যত স্বর্ণ আসে তার সামান্য অংশই উদ্ধার হয়। বাকিটা চোরাকারবারিরা পাচার করে ফেলে। এর সঙ্গে কাস্টমসসহ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু লোকের যোগসাজশ আছে।

কর্মকর্তারা জানান, দেশে সোনা চোরাচালানের সবচেয়ে নিরাপদ রুট ছিল ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তবে বছর কয়েক আগে এই বিমানবন্দরের সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। বলা হয়, এখানে সোনার চোরাচালান ঢুকলে বা ধরা পড়লে এর পুরো দায়ভার কর্মকর্তাদের নিতে হবে।

এরপরই শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে সোনার চোরাচালান কমে আসে। বিকল্প হিসেবে চোরাকারবারিরা বেছে নেয় সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাগেজ রুলের আওতায় একজন যাত্রী বৈধভাবে শুল্ক দিয়ে সর্বোচ্চ ২০ ভরি বা দুটি সোনার বার বিদেশ থেকে আনতে পারবেন। এ জন্য প্রতি ভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয়। কেউ যদি বার না এনে ১০০ গ্রাম বা সাড়ে আট ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার আনেন, তবে তাকে শুল্ক দিতে হবে না।

কাস্টমসের সুপারিনটেনডেন্ট সাজ্জাদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ যদি দুটি সোনার বার আনে, তবে তাকে ৪০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয়। ১০০ গ্রাম স্বর্ণালংকার আনলে শুল্ক ছাড়াই নিতে পারেন। কেউ কেউ ১০০ গ্রামের চেয়ে ১০-১৫ গ্রাম স্বর্ণালংকার বেশি আনলে আমরা শুল্ক নিয়ে সেগুলো ছেড়ে দিই। তবে এর বেশি হলে জব্দ করা হয়।’

শুল্ক গোয়েন্দারা বলেন, বেশির ভাগ যাত্রীই বিদেশ থেকে সোনা আনার নিয়মের বিষয়ে জানেন না। অনেক সময় চোরাকারবারিরা তাদের বাহক হিসেবে কাজে লাগান। নানা কৌশলে যাত্রীদের না জানিয়েই দেশে সোনা পাচার করেন। আবার এর সঙ্গে বিভিন্ন বিমান পরিবহন সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিমানবন্দরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত। ফলে অনেক বড় চালানই ধরা পড়ে না।

তবে সুপারিনটেনডেন্ট সাজ্জাদ হোসেনের দাবি, ‘চোরাচালান রোধে আগের চেয়ে এখন আমরা অনেক তৎপর। তাই এখন চালান বেশি আটক হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর