ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চের আগুন জেসমিন আক্তারের সব কেড়ে নিয়েছে। ওই আগুনে দগ্ধ ছেলেসন্তানটিও চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা গেছে। ভয়াবহ ওই আগুন আগেই কেড়ে নিয়েছে তার দুই সন্তান। নিজে ধুঁকছেন হাসপাতালের আইসিইউতে।
রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তামিম হাসান নামের ৮ বছর বয়সী শিশুটির মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের আবাসিক সার্জন এস এম আইয়ুব হোসেন জানান, শিশু তামিমের চিকিৎসা চলছিল নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখানে তার মায়েরও চিকিৎসা চলছে। তামিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে মারা যায়। তার শ্বাসনালিসহ শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
শিশুটির মা জেসমিন আক্তার আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। ৩৫ বছর বয়সী এ নারীর এক সন্তান মারা গেছে দুর্ঘটনাস্থলেই। মাহিনুর নামের ৫ বছর বয়সী কন্যার মৃত্যু সংবাদ জানার আগেই ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা জেসমিনের আশ্রয় হয় আইসিইউতে। সেখানে তার শারীরিক জটিলতা চরমে পৌঁছে।
২৫ ডিসেম্বর ভোরের দিকে একটি মৃত মেয়েসন্তান প্রসব করেন তিনি। আর একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছেলে তামিম মারা গেল রোববার।ছেলে-মেয়ের মৃত্যু ও মৃত সন্তান প্রসবের পর এখন জেসমিনকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তার শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে।
জেসমিনের মামা মামুন হোসেন জানান, জেসমিনদের বাড়ি কেরানীগঞ্জে। শোকাবহ এ পরিস্থিতিতে তারা পাগলপ্রায়। তিন সন্তান হারানো মাকে নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। সব সন্তান হারানোর সংবাদ তাকে জানালে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন তারা।
ঝালকাঠির পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় সুগন্ধা নদীতে ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চ আগুনে পুড়ে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের প্রাণহানির কথা জানা গেছে।
পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিলেন, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, লঞ্চটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিলেন। তবে লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অনেকে বলছেন, নৌযানটিতে যাত্রী ছিলেন ৮০০ থেকে এক হাজার।